পোষ্য প্রাণী এবং ভালোবাসা

জীবনযাপন

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক: ‘বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’- বিখ্যাত এই লাইনটি লিখেছেন বাঙালি লেখক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। লেখকের এই লেখনীতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সমাজে যার অবস্থান যেখানে তাকে সেখানেই মানায়।

যুগ পাল্টেছে, সময়ের গতিতে ভালোবাসার পরিধিও বেড়েছে। ভালোবাসার বন্ধন এখন ছড়িয়ে পড়েছে মনুষ্য থেকে বন্য প্রাণীতে। শখের প্রাণীকে বশ করে ঘরে তুলে এখন আদর যত্ন দিয়ে আগলে রাখা হচ্ছে। মনুষ্য পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পশু-প্রাণীদের লালন করা হচ্ছে। পূরণ করা হচ্ছে প্রিয় পশুটির সব চাহিদা। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে চারদেয়ালের মাঝেই। প্রিয় পৌষ্যকে আত্মার পরম বন্ধু করে আগলে রাখছে মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের ভালোবাসায় এখন সিক্ত হচ্ছে প্রিয় পৌষ্য প্রাণী। একেই বলে পশু প্রেম।

ভালোবাসা দিবসের রঙ তো সবার জন্যেই। যে কারো প্রতিই ভালোবাসা প্রকাশ হয় এই দিনে। ঘরে থাকা প্রিয় পৌষ্যের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশও তাই বাদ পড়ে না। কেননা, নিসঙ্গতার একান্ত সঙ্গী থাকে প্রিয় এই প্রাণীটি।

শখের বশে কেউ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পালছে, কেউ কবুতরের মেলা বসিয়েছে বাড়ির ছাদেই। কেউ আবার দেশি-বিদেশি বিড়াল বা কুকুর নিয়ে মেতে উঠেছে। কত পশু-পাখিকেই না বশে এনেছে মানুষ। খাঁচায় আটকে রাখলেও এসব পৌষ্য প্রাণীর আদর- যত্নে কোনো কমতি হচ্ছে না। প্রিয় প্রাণীর চাহনী, কণ্ঠের স্বর সবকিছুই এখন মালিকের পরিচিত। সামান্য অসুবিধা হলেই পৌষ্য প্রাণীকে নিয়ে ছুটে যাচ্ছে পশু ডাক্তারের কাছে। কী খাবে, কীভাবে থাকবে সব সুবিধা দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকছে। প্রিয় পৌষ্যের কান্নার শব্দে যেন মালিকেরও বুক কেঁদে উঠে। আবার পৌষ্য প্রাণীর ছুটে বেড়ানো দেখে খেলায় মেতে উঠে মালিকও। দিনে দিনে পোষা প্রাণীটি যেন হয়ে ওঠে পরিবারেরই একজন। এভাবেই জমে উঠে পশুর সঙ্গে ভালোবাসার চিত্র।

না, এই ভালোবাসা একতরফা নয়। শুধু মালিকই যত্ন নিচ্ছে, ভালোবাসছে তা কিন্তু নয়। প্রিয় পৌষ্য প্রাণীটিও নিজের সাধ্যমতো মালিকের খেয়াল রাখছে। আমৃত্যু মালিকের হয়ে নিজেকে উত্সর্গ করে দিচ্ছে। এ যেন এক নিস্বার্থ ভালোবাসা।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলাধুলা করলে, কথা বললে এবং সময় কাটালে মানসিক চাপ কমে যায়। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে শরীর ও মনে ফুরফুরে ভাব আসে। মন শান্ত হয়।

পশু প্রেমে নিবেদিত এখন অনেকেই। তারা শুধু নিজের পোষা প্রাণীর ভাষা বা ইশারা বুঝতে পারে তা কিন্তু নয়। বাড়ির বাইরে পথে বা কোনো জঙ্গলে যেখানেই পশুদের দেখবে তাদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করে। ওইসব প্রাণীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করে। এবং সাধ্যমতো সেইসব প্রাণীকে সমস্যা থেকে বাঁচিয়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে পশুপ্রেমিরা। পশুরাও যেন তাদের কাছে নিজেদের নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়। এমন ভালোবাসা চিরন্তন, নিষ্পাপ।

ভালোবাসার মানে যদি নিস্বার্থতা হয়, তবে হয়তো পশুর সঙ্গে পশুপ্রেমিদের এই ভালোবাসাকেই প্রকৃতভাবে সঙ্ঘায়িত করা যায়। ভালোবাসা দিবসে তাই পৃথিবীর সব পশুপ্রেমীদের প্রতি রইল অগাধ শ্রদ্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *