সাভারে মিস্ত্রি থেকে পীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর, জানালেন গ্রামবাসী 

সারা বাংলা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

১৫ বছর আগে, গরুর খামারের তত্ত্বাবধায়ক ও সৌদি আরবে প্রবাস জীবনে ছোটখাটো যন্ত্রপাতির কাজে পটু কারিগর বা মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের চাকুলিয়া গ্রামের মৃত আফসার উদ্দিন সেন্টুর ছেলে মো: কাজী জাবের (৩৩)।
শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের পদ্মা পাড়ে অবস্থিত সুরেশ্বর দরবার শরীফে মুরিদ হয়ে নাম পরিবর্তন করে নিজে পীর সেজে এখন নাম রেখেছেন পীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর।এক সময় তিনি মাটির ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। এখন পীর হয়ে চিকিৎসা দেয়ার নামে তাবিজ-কবজ দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল একটি মাজার শরীফ। সেই মাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে মুরিদরা ও পার্শ্ববর্তী ধামরাই ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার কিছু লোকজন এসে কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরের পায়ে সেজদা দেয়।
শুধু তাই নয় পীর হয়ে নারী-পুরুষদের নিয়ে রাত জেগে মাদক সেবন এবং নাচগান করেন তিনি।
কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরের ইসলামরিরোধী কর্মকাণ্ড ফাঁস এবং বিতর্কিত একাধিক বয়ানের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।এ ঘটনায় সাভার, বনগাঁও ইউনিয়ন ও চাকুলিয়া  গ্রামের বাসিন্দারা সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত সাভার উপজেলা পরিষদ চত্বরে পীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরের আস্তানা উচ্ছেদ ও তার কার্যকলাপ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবন্ধন করেছে।বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে চাকুলিয়ার ভন্ড পীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড ও সাধারণ মুসল্লিদের উপর বর্বরোচিত আক্রমণের প্রতিবাদ এবং গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ভন্ডপীর জাবেরকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এতে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর একজন ভণ্ড পীর। তিনি কয়েক বছর আগে এলাকায় গরুর খামারের তত্ত্বাবধায়ক এবং প্রবাসে মিস্ত্রির কাজ করতেন। ১৫ বছর পূর্বে কাজী জাবেরের বাবা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে বিপথগামীতায় জড়িয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তিনি ধর্মান্তরিত হওয়ার পর খ্রিস্টান অধ্যুষিত এলাকা সাভারের বিরুলিয়া ও ধরেন্ডা এলাকায় অবস্থান করে খ্রিস্টানদের উপাসনালয় গির্জায়া ধর্মীয় উপাসনার জন্য নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ২০০৮ সালে কাজী জাবেরের বাবা মৃত্যুবরণ করলে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী ও কয়েকজন খ্রিস্ট ধর্মগুরু বাড়িতে এসে কাজী জাবেরের বাবা আফসার উদ্দিন সেন্টুকে খ্রিস্টান ধর্মের বিধি অনুযায়ী সমাহিত করার চেষ্টা চালায়। তবে এলাকাবাসীর আপত্তির ভিত্তিতে তাকে মুসলিম ধর্মের বিধি অনুযায়ী জানাযা শেষে স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হলেও ধর্ম ব্যবসায়ী ভন্ডপীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর জানাযার পর উপস্থিত জনতাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে সময় ক্ষেপণ করে রাতের অন্ধকারে কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে নিজ বসত ঘরের মেঝেতে আফসার উদ্দিন সেন্টুর লাশ সমাহিত করেন। এর কয়েকদিন পর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর ও তার পরিবারের সদস্যরা মিলে কবরটিকে মাজার হিসেবে রূপদান করেন। কাজী জাবের নিজেকে খেলাফত প্রাপ্ত পীর হিসেবে প্রচার চালিয়ে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মভীরু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মুসল্লিদের মধ্যে ফাটল ধরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়।
বক্তারা বলেন, কিছু ভণ্ড লোকের প্ররোচনায় প্রথমে আধ্যাত্মিক জগতের বেশ, পরে ভণ্ড পীর হয়েছেন তিনি। আস্তানা করে কিছু সহজ সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে তাবিজ-কবজের মাধ্যমে বশীভূত করেন এবং তার পায়ে সেজদা করান। ওরশের নামে নারী-পুরুষদের দিয়ে রাতভর নাচানাচি করেন। শুধু তাই নয় তার আস্তানায় মাদক সেবন করে নিঃসন্তান নারীদের ভিন্ন পর পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করেন তিনি। এ কারণে সমাজের নারী পুরুষ ও যুবকরা কুসংস্কার ও ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই ভণ্ড পীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরের আস্তানা উচ্ছেদ ও তার কার্যকলাপ বন্ধ করা প্রয়োজন।বক্তারা আরো বলেন, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ ও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও কয়েকজন মুসল্লী গত ২৯ সেপ্টেম্বর এশার নামাজের পর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরের বাড়িতে গেলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে তাদের উপর গরম ফুটানো পানি শরীরে ঢেলে দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ করে ইট পাটকেলসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিক্ষেপ করলে  মাওলানা তৈয়বুর রহমান, মাওলানা সাইদুর রহমান, মোশারফ, সাকিব ও পরশ গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। বক্তারা বলেন, স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইদুর রহমানসহ আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকাকালে কাজী জাবের তার অনুসারীদের দিয়ে নিজের বাড়িতে নিজেই ভাঙচুর জ্বালিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পীরের বাড়িতে হামলা হয়েছে মর্মে অপপ্রচার চালিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের ভুল বুঝিয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়। আহতরা সুস্থ হলে সাভার মডেল থানায় কাজী জাবেরসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করতে কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে ঘটনার বিষয়ে আরেকটি কাউন্টার মামলা দায়ের করে। সেখানে হয়রানির উদ্দেশ্যে স্থানীয় ইমাম ও ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামী করে গ্রামের কয়েকশ সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। সেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ভন্ডপীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পীর কাজী জাবের আল জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা মুসলমান। ইসলামবিরোধী কোনো কাজ করি না। এলাকার এক শ্রেণির লোক আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আমাদের মাজার শরীফে সেজদা দেয়া নিষেধ। তাছাড়া এখানে খারাপ কোনো কাজ হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *