ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলায় মহরম আলী নামের এক ব্যাবসায়ীর মৃত্যু নিয়ে ধ্রুবজাল সৃষ্টি হয়েছে। রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে তাঁর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্তে নিহতের শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি চিকিৎসক।
তবে নিহতের পক্ষের লোকজনের দাবি, শনিবার (২৬ অক্টোবর) সদর উপজেলার ছোটহরণ এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের আঘাতে মহরম আলী নিহত হয়েছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষসহ স্থানীয়দের ভাষ্য, মহরহম আলী হৃদরোগ হয়ে ঘটনাস্থল থেকে অন্যত্র মারা যান।
নিহত মহরম আলী সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের ছোট হরণ এলাকার অহিদ মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ছোট হরণ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অলি মিয়ার পক্ষের লোকজনের সঙ্গে একই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমানের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। পূর্ব বিরোধের জেরে শনিবার সকালে ছোটহরণ রেললাইনে মোড়ে মুজিবুর রহমানের পক্ষের জাফর মিয়া ও খলিল মিয়ার সঙ্গে অলি মিয়ার পক্ষের হানিফ মিয়া ও মানিক মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরেই দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০০ গজ দূরত্বে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন মহরম আলী। পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে সংঘর্ষের বিষয়টি জানতে পারেন মহরম আলী। সে সময় বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে তাকে উদ্ধার করে জেলা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু দুপুরের পর থেকে সংঘর্ষে আহত হয়ে মহরম আলী মারা গেছেন বলে অলি মিয়ার পক্ষের লোকজন প্রচার করতে থাকেন। পরে বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ গ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে স্বজনসহ অলি মিয়ার পক্ষের লোকজন।
তবে নিহতের বড় ভাই আব্দুল মালেক জানান, অলি মিয়া ও মুজিবুর রহমানের মধ্যে ইউপি নির্বাচন নিয়ে পূর্ব থেকে বিরোধ চলছিল। পাশাপাশি ছোট হরণ এলাকার রেললাইনের পাশের সড়ক ব্যবহার ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে গত শনিবার মুসা মিয়ার নামের এক ব্যক্তি অলি মিয়ার বাড়ি থেকে ফিরছিলেন। সে সময় মুজিবুর রহমানের পক্ষের শামসুল হকের নেতৃত্বে কয়েকজন তাকে মারধর করে। এরই জের ধরে দুইপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বাড়িতে ঢুকে তারা মহরম আলীর উপর হামলা চালায়। সে সময় বাড়ির পেছনের দিকে পালানোর সময় প্রতিপক্ষের হামলায় আমার ভাই ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মুজিবুর রহমানে পক্ষের আমির হোসেনের স্ত্রী সাহিদা বেগম বলেন, সংঘর্ষে আমাদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে কেউ মারা যায়নি। মহরম আলী হার্ট এ্যাটাক করেছে। এলাকার মাইকেও হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে বইলা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথমে হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে আনা হয়। পরে আবার ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। তখন থেকে মহরম আলীর পরিবারের লোকজনসহ অলি মিয়ার লোকজন প্রচার করা শুরু করে যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। যা আদৌ সত্য না। বর্তমানে গ্রেফতারের ভয়ে আমাদের পক্ষের পুরুষ লোকজন গ্রাম ছাড়া।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সুমন ভুইয়া বলেন, ময়নাতদন্তে নিহতের শরীরের কোথাও আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ভিসেরাসহ শরীরের অন্যান্য অংশাবশেষ পর্যালোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, নিহতের পক্ষের কয়েকজন বলেছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু একটি পক্ষ এটিকে হত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছেন। এঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় কোনো