মোঃ ম.ইলাহী ,
বিশেষ প্রতিনিধিঃ-
শেরপুরের ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদীতে সৃষ্ট বন্যার পানি উজান থেকে নামতে শুরু করলেও ভাটির নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
একইসঙ্গে নতুন করে শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার, ধলা, বাজিতখিলা ও পাকুরিয়া ইউনিয়নের; নকলা উপজেলার নকলা, উরফা, গণপদ্দী ও গৌরদ্বার ইউনিয়নের এবং নকলা পৌরসভার আংশিক প্লাবিত হয়েছে।
শেরপুরের ডিসি তরফদার মাহমুদুর রহমান দুপুরের দিকে বলেন, শনিবার রাতে ভারি বৃষ্টি হয়নি। রোববার সকাল থেকে আবার বৃষ্টি হচ্ছে। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য এবং উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কাজ করছেন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা পুরোদমে চলছে।বন্যার্তদের সহায়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বানভাসি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ১৭টি মেডিকেল টিম এলাকায় কাজ করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে বন্যার্তদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ০৬ জন; এর মধ্যে নালিতাবাড়ী উপজেলারই ০৫জন।নকলা উপজেলার গণপদ্দি ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের প্রয়াত তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৬০) মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছেন। রোববার বিকালে এ ঘটনা ঘটে বলে নকলা থানার ওসি হাবিবুর রহমান রোববার রাত ১০টার দিকে জানান।পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তার লাশ উদ্ধার করে।
মৎস্য ও কৃষির ক্ষতির বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, “পাহাড়ি ঢলে ও বাঁধ ভেঙে জেলার ৬ হাজার ৫৬টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে মাছ চাষিদের প্রায় ৫৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।”শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, “বন্যায় এবার জেলায় রোপা আমন আবাদ হয়েছে ৯৩ হাজার ৭০৮ হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ৩২ হাজার ১১৮ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ এবং ১৪ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমির আমন ধান আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় ২ হাজার ৬৩ হেক্টর জমির সবজি আবাদের মধ্যে বন্যার পানিতে ৩৯৬ হেক্টর সম্পূর্ণ এবং ৬৬৩ হেক্টর জমির সবজি আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলায় বস্তায় আদার চাষ হয়েছে ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬১৮টি বস্তায়।এর মধ্যে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ১৯৪টি বস্তা।
বন্যায় মোট ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৩০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।পানি সরে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপন করা যাবে বলে জানান হুমায়ুন কবির।কমছে নদ-নদীর পানি।জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান রোববার সন্ধ্যায় বলেন, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি কমে নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চেল্লাখালী নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এছাড়া পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেও তা বিপৎসীমার ৫৫৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।