সেনাবাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহবান সাবেক সেনা প্রধানের

জাতীয়

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় না করাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া। তিনি বিজিবি ও সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে দেশের বিদ্যমান অবস্থার সংকট নিরসনে করণীয় প্রসঙ্গে রবিবার দুপুরে রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। ‘বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। রাজধানীর মহাখালীতে রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া ক্লাব) দ্বিতীয় তলায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল বক্তব্য দেন ইকবাল করিম ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাপ্রধান নূরুদ্দীন খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন সাবেক সেনাকর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক সংকটকে সামরিকীকরণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, আমরা সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার সামরিক সরকারের এমন অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত সম্পদশালী সেই দেশটিকে আজ ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই শাসকদেরকে গণহত্যার দায় নিয়ে এখন আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে।’

‘এই রাজনৈতিক সংকটকালে আমরা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি রাজপথ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সীমান্ত এই মুহূর্তে অরক্ষিত। ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য সীমান্ত হতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেকোনো আপতকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। অনুরোধ করে বলছি এই সংকট আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না’, বলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুটা দেশবাসী দেখেছেন, এর কোনো কিছুই মানুষের স্মৃতি থেকে মুখে যাওয়ার নয়। প্রথম পক্ষ অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। সারাদেশের শিশু কিশোর ও তরুণরা শত উসকানি, হামলা ও নির্যাতনের মধ্যেও ধৈর্য ধরে শৃঙ্খলার সঙ্গে আস্তে আস্তে আইন মেনে সামনে পা বাড়াচ্ছিল। বিপরীতে দ্বিতীয় পক্ষ যে উপর্যুপুরি উসকানি দিলো, গুণ্ডা পাণ্ডা দিয়ে সন্ত্রাস চালালো এবং পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিজিবি নামিয়ে, আকাশে হেলিকপ্টার উড়িয়ে নির্বিচারে গুলি করে অগনিত শিশু কিশোর ও তরুণের তাজা প্রাণ হরণ করল, তা দেশবাসী কি এত সহজে এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভুলে যাবে!’

সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী তিন দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে যে সম্মান মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করেছে তা আজ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। সার্বজনীন মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক সর্বোচ্চ মান রক্ষা করেই আপনাদের সকলকে নিজ দেশের জনগণের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। চোখের সামনে আমরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।

আন্দোলন দমনের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে ইকবাল করিম বলেন, ‘আক্রমণকারীরা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিরোধের মধ্যে পিছপা হতে বাধ্য হলে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কখনো সম্মুখভাবে, কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্যান্য বাহিনীগুলো এই গণআন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশের স্বশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি, তাদের মুখে বন্দুক তাক করেনি।’

‘দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব রক্ষার এই মহান ব্রত পালনে আল্লাহ তায়ালা নিশ্বয়ই আমাদের সকলের সহায় হবেন, ইনশাল্লাহ, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের হেফাজত করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *