বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন

সারা বাংলা

চয়ন বিশ্বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, জাতীয়করণের পূর্বে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়ন বন্ধ রাখা ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিবারের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধন শেষে শিক্ষকরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।

মানববন্ধন শিক্ষকরা বলেন, বিগত ফ্যসিষ্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। জুলাই-আগস্ট/২০২৪ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা বৈষম্য বিরোধী দেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছে, তাতে আমরাও নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ৯৭% বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলি জাতীয়করণ করা অত্যন্ত জরুরী। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই বই পড়ানো, একই বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা অথচ সরকারি ও বেসরকারি নাম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বিরাট বৈষম্য তৈরী করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়।

শিক্ষার সকল ষ্টকহোল্ডারদের প্রাণের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ। শিক্ষা বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক। শিক্ষকেরা একাডেমিক কাজে দক্ষ। তাদের সকল প্রশিক্ষণ পেড্যাগোজি কেন্দ্রিক। ক্লাস রুমের পঠন-পাঠনে তারা দক্ষ। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনের দীর্ঘ ৩১ বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের সকল প্রশিক্ষণ প্রশাসনিক। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্টেরর, কাজের ধরন ভিন্ন, চর্চ্চা বা অনুশীলন ভিন্ন।

শিক্ষকরা প্রশাসনে অনভিজ্ঞ, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপ-পরিচালক পদে তাদের পদায়ন করা হলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যতা যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনি ক্লাসরুম শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ একজন শিক্ষককে উল্লিখিত পদ সমূহে পদায়ন করা হলে, বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে অফিসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিম্নপদের লোকজনের পরামর্শ দ্বারাই পরিচালিত হতে হয়। প্রশাসনিক দৃঢ় সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করতে পারে না। এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকগণকে প্রদায়ন করা হলে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অধীনে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রধানগণকে কাজ করতে হবে। এতে শিক্ষাঙ্গনের চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে।

শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা ১০ থেকে ২২ বছরের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত (এসইএসআইপি) এর ১১৮৭ টি পদ জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে দাবী জানানো হয়। বহুমাত্রিক সমস্যায় মাধ্যমিক শিক্ষা জর্জরিত। স্কুল, মাদ্রাসা, সরকারি, বেসরকারি এরকম নানা রকম প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে শিক্ষা সংস্কার কমিশন করার জোর দাবি জানান বক্তারা।

বাংলাদেশ টিচার এসোসিয়েশন (বিটিক) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, বেসরকারি স্কুলের চাকুরি জাতীয়করণের আন্দোলন অনেক দিন ধরে আমরা করছি। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে এ আন্দোলন হয়ে আসছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় সকল ভেদাভেদ ভুলে আমরা আজ এক হয়েছি।

এ জাতীয়করণের পূর্বে পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদয়ন উচিত নয়। বেসরকারি শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে সবকিছু করা উচিত। বর্তমান সরকার সকাল বৈষম্য দূর করবে, সেটাই কাম্য। বিগত সরকারের আমলে বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু স্কুলকে সরকারি করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল স্কুলকে জাতীয়করণের দাবি জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে জেলার স্কুল ও মাদ্রাসার প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলো।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *