ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত হলে কৃষিতে সুদীন ফিরবে

বাণিজ্য

এ কে এম রাশেদ শাহরিয়ার

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রধান শক্তি কৃষি। কর্মসংস্থান ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় অবদান এই কৃষির। ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে পারলে দূর হবে কর্মসংস্থান সংকট। টেকসই উন্নয়ন ঘটবে গ্রামীণ জনপদের। কর্মসংস্থান সন্ধানে শহরমুখীতা কমবে বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর। নানা দুর্যোগ এবং নদী ভাঙ্গনেও নিঃস্ব হওয়ার হ্রাস পাবে। উন্নয়ন লাভ করবে গ্রামীণ ব্যবসা-বাণিজ্য কৃষি উদ্যোগ। শিক্ষিতরা আগ্রহী হবে গ্রামে বসবাসের, গ্রাম পাবে যোগ্য নেতৃত্ব। কমবে অপরাধ ও আদালতের অপেক্ষমান বিচার কার্যক্রম। চিকিৎসা ও শিক্ষার উন্নয়ন হবে আশাব্যঞ্জক।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৪ সালে শহরমুখী মানুষের হার ২৮.২ শতাংশ। ২০৩১ সালের মধ্যে ঢাকা হবে বিশ্বের ৬ষ্ঠ জনবহুল শহর। ২০৫০ সালে শহরে বসবাসের জনসংখ্যা হবে ৬৫ শতাংশ। আইন করেও মানুষের শহরে আসা আটকানো যাবে না। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব এ বিপর্যয়ে।

জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এর তথ্য অনুযায়ী ২২টি কৃষি পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষে। এই কৃষিভিত্তিক জনপদ কৃষিতে বিজ্ঞান ভিত্তিক উন্নয়ন–উৎপাদন সহ বিশ্ব কৃষি খাতে প্রশংসনীয় অবদান রেখে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ভূমিকা থাকলে কৃষি পণ্য উৎপাদনে এ দেশ হতে পারতো বিশ্বের প্রথম সারির একটি।

বাংলাদেশের গরিব কৃষক সুুদে টাকা এনে, ধার দেনা করে, মহাজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফসল ফলায়। কৃষকদের সংগঠন সমবায় শক্তিশালী না থাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ফসল বিক্রি করে কৃষক। ক্রেতা যাচাইয়ের সুযোগ পায় না তাঁরা। এদিকে ব্যবসায়ীরা সংগঠিত একত্রিত থাকায় তৈরি করে সিন্ডিকেট। অন্যদিকে কৃষকের ফসল পচনশীল, সংরক্ষণ খরচ বেশি তাই তড়িঘড়ি করে ফসল বিক্রি করে। সিন্ডিকেট শক্তিশালী থাকায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক।

বাণিজ্য ও কৃতিত্ব কৃষি খাদ্য বাজারে ক্ষুদ্র কৃষকের প্রবেশ অধিকার উন্নত করার জন্য কৃষকদের সংগঠন সমবায়ের শক্তিশালী নেতৃত্বর প্রয়োজন। যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বৃহৎ বাজারের প্রবেশ অধিকার নিশ্চিত হবে। তৈরি হবে দরকষাকষি ও ক্রেতা পছন্দের সুযোগ। খাদ্য নিরাপত্তা মেনে চলাকে challenge করে কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য আদায়ের পথ তৈরি করে দিতে হবে সরকারকে। মধ্যসত্ত্বাভোগী ফড়িয়া–বেপারী–পাইকারদের দৌরাত্ম-যোগসাজস বন্ধের মাধ্যমে কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য  এবং সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ফসল বিক্রি নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রয়োজন কৃষিপণ্য পরিবহনে সড়কে চাঁদাবাজি এবং মধ্যসত্ত্বাভোগীর দৌরাত্ম কমাতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ। কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় বাজার প্রতিযোগিতা বজায় রাখা। কৃষকদের সহজ ঋণের ব্যবস্থা করা, কৃষি উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়ক mega farmers market তৈরি করা। প্রয়োজন আধুনিক বাজার ব্যবস্থার জ্ঞান অর্জন ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, কৃষি পণ্য branding মান, কৃষি পণ্য packaging মান, levelling মান, রপ্তানি যোগ্য কৃষি পণ্যের জন্য উৎপাদন প্রশংসাপত্র, পণ্যের গুণগত মান নিরাপত্তার প্রতি ভোক্তাদের আস্থা অর্জন।

কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে। নিশ্চিত করে সুস্বাস্থ্য এবং পুষ্টি। কৃষকের পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে দেশ। এই কৃষিভিত্তিক জনপদের ভাগ্যের কোনদিন উন্নতি হবে না যদি কৃষকের ভাগ্যের উন্নতি না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *