বঙ্গ সংবাদ রিপোর্ট :
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রায় এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা কর্মচারীর পেনশনের টাকা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট বা স্থায়ী আমানত হিসেবে সঞ্চয় রাখা পেনশনের কয়েকশো কোটি টাকা তুলে আনা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের চরম তারল্য সংকট এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেনশন অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
দৈনিক বঙ্গ সংবাদের প্রতিনিধি এই প্রতিবেদক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন, বিআইডব্লিউটি ‘র হিসাব শাখার অতিরিক্ত পরিচালক মামুন হোসেনের সঙ্গে। যিনি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত সঞ্চয় করার বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছেন।
মি. মামুন হোসেনের কাছে বঙ্গ সংবাদের এই প্রতিবেদক জানতে চেয়েছিলেন, সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে কতগুলো ব্যাংকে বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেনশনের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে রাখা হয়েছে। সর্বমোট টাকার পরিমান কতো। এই দুটি প্রশ্নের সোজাসাপ্টা কোনো উত্তর তিনি দেননি। মি. হোসেন বলেছেন, প্রায় সব সরকারি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে। তবে সর্বমোট কত টাকা ব্যাংকগুলোতে রাখা হয়েছে সেই বিষয়টি তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। এছাড়া যে সব বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখা হয়েছে তার তালিকাও সুনির্দিষ্ট করে বলতে অপারগ ছিলেন। শুধু বলেছেন, বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে টাকা রাখা হয়েছে।
উল্টো তিনি সরকারের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বলেছেন, সরকার বলেছেন, সব ব্যাংকের আমানত নিরাপদ আছে। টাকার কোনো সমস্যা হবে না। সরকার দেখবে। যে কারনে ঝুঁকিতে থাকা বেসরকারি ও সরকারি ব্যাংকের টাকা নিয়ে তিনি চিন্তত নন। তাছাড়া এখন সব আর্থিক লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে হয়। সেই জন্য পেনশনের টাকা নিয়ে চিন্তা করার কারন নেই।
তিনি বলেন, তারল্য সংকট বা দেউলিয়ার পথে থাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে অনেক টাকা তুলে আনা হয়েছে। খুব বেশি টাকা ব্যাংকগুলোতে নেই। আবার বলছেন, তারা চাইলেই ৪/৫ লাখ টাকা ব্যাংকগুলো দিতে পারছেন । যে কারনে চিন্তার কিছু নেই।
বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মামুন হোসেন এই যে একবার বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা দেয়, সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন, আবার বলছেন, তারা টাকা তুলে এনেছেন । খুব বেশি টাকা বেরসরকারি ব্যাংকগুলোতে নেই । এই নানা ধরনের দ্বিমুখী বক্তবে একটা ঝুঁকিপূর্ণ সংকটের ইঙ্গিত রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি ১০ টি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এর সবক’টি বেসরকারি পর্যায়ের। এই ১০ ব্যাংকেই বিআইডব্লিউটিএ’র পেনশন আমানত ডিপোজিট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যা প্রকাশ করছে না বিআইডব্লিউটিএ’র হিসাব বিভাগ।
এসআইবিএল ব্যাংকে প্রায় দেড়শো কোটি টাকা রাখার বিষয়টি উল্লেখ করার পর মি.মামুন বলেছেন, এই ব্যাংকে আমানত ছিল ১৪০ কোটি টাকার মতো । লেনদেনর পর তাদের হাতি কিছু টাকা থাকতো। তারা পুনরায় আমানত করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আর্থিক লেনদেন বা প্রবাহটা বাংলাদেশ ব্যাংক কেন্দ্রীক হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের হাতে আর টাকা থাকে না। যাবতীয় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক করার কারনে দায় দায়িত্বও তাদের নেই।
নির্ভরযোগ্য অনেকগুলো সূত্র বলেছেন, হিসাব বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তারা আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখতে বেশি আগ্রহী ছিলেন মূলত: বেশি লাভ এবং বেতনের বাইরে নিজেদের বাড়তি আয়ের লোভে। তাদের ম্যাকানিজমে ট্রাস্টিবোর্ড কিংবা কর্তৃপক্ষের বোর্ড অনুমোদন দিতেন কোনো রকম যাচাই বাছাই ছাড়াই ।
এছাড়াও দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি গোপন আতাঁতের মাধ্যমে এই ফিক্সড ডিপোজিট রাখার বিষয়টি চূড়ান্ত হতো । যেখান থেকে হিসেবের বাইরে, কোনো কাগজে কলমে তথ্য না রেখেই লাখ লাখ টাকা সুবিধা নিতো তারা। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে এই অবৈধ সুবিধা গ্রহনের বিষয়টি। কয়েকজন কর্মকর্তা অবৈধ টাকা আয়ের লোভেই দুর্বল ব্যাংকগুলোতে পেনশনের টাকা ডিপোজিট করেছে। যা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে ।
যদিও এ কথা মানতে নারাজ মামুন হোসেন। তিনি বলেছেন, এমন সুবিধা গ্রহনে কোনো প্র্রশ্নই আসেনা। কারণ ব্যাংক সিলেকশনে প্রথমে ৯ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশ দরকার হয়। সেটা অনুমোদন দেয় বিআইডব্লিউটিএ বোর্ড। এখানে গোপন আতাঁত করে লাখ লাখ টাকা গ্রহনের কোনো সুযোগ নেই। যারা এটা বলছে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। দুর্নাম রটাচ্ছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিআইডব্লিউটিএ’র অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী বঙ্গ সংবাদকে জানিয়েছেন, হিসাব বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মামুন হোসেন যা বলছেন তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য তাতে তাদের সন্দেহ রয়েছে। তাদের প্রশ্ন, অনেক ভালো ব্যাংক থাকতে কেনো আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকে আমানত সঞ্জয় করতে হবে। তারা এখন খুবই চিন্তিত। যদিও পেনশনের বিষয়টি সরকার নিয়মতান্ত্রিকভাবেই পরিশোধ করবেন। তারপরেও কিছু কর্মকর্তার মধ্যসত্ব লাভের বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে।