বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক Civil Appeal Nos. 294-98 of 2003 এ প্রদত্ত রায় অনুযায়ী সরকারের উপসচিবগণের পূর্বের কোন ক্যাডার পরিচিতি থাকবে না এবং সকল উপসচিব সম-অধিকার ও সমমর্যাদাসম্পন্ন হবেন। তিনি তখন সচিবালয়ের উচ্চতর উপসচিব পদে অধিষ্ঠা (Status) নিয়ে অন্য সকল উপসচিবের সাথে একশ্রেণিভুক্ত হয়ে সম-অধিকারসহ পরবর্তী উচ্চতর যুগ্মসচিব পদে বা পরবর্তীতে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হইবার জন্য বিবেচিত হবেন। পদোন্নতির ভিত্তি হবে মেধা, দক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতা। Bangladesh Civil Service Seniority Rules, 1983 অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক সুপারিশকৃত একটি ব্যাচের সম্মিলিত তালিকাই হলো জ্যেষ্ঠতার ভিত্তি।
বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২২তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাগণ ইতোপূর্বে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। আমরা অন্যান্য ক্যাডারের ১৩ম ব্যাচ থেকে ২২তম ব্যাচের ১৯৫ জন কর্মকর্তা “সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২” অনুযায়ী যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির সকল শর্ত পুরণ করেছি এবং তন্মধ্যে ১৩৭ জন কর্মকর্তা বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছি। আমাদের মধ্যে ন্যূনতম ৬৭ (সাতষট্টি) জন কর্মকর্তা তিন বার (২৯.১০.২০২১ খ্রি., ০২.১১.২০২২ খ্রি., এবং ০৪.০৯.২০২৩ খ্রি.) পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি আয়কর ও শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন উপসচিব জুনিয়র কর্মকর্তাদের দ্বারা সুপারসিডেড হয়েছেন।
বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে একপেশে ও সংকীর্ণ রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যে সকল সরকারি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি বঞ্চিত করার মাধ্যমে জনপ্রশাসনে নানাবিধ বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে তা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন এই বাংলাদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সূত্রোক্ত ৪নং প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচ পর্যন্ত বঞ্চিত উপসচিবগণের পদোন্নতি নিশ্চিত করলেও অন্যান্য ক্যাডারের ১৩তম থেকে ২২তম ব্যাচের পদোন্নতির জন্য যোগ্য ও বঞ্চিত ১৯৫ জন উপসচিবের ন্যায্য দাবী আমলে নেয়া হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনটি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সূত্রে বর্ণিত ১ম ও ২য় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ও ২৫তম ব্যাচের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের যে সকল কর্মকর্তা উপসচিব হিসেবে যোগদান করেছেন, আলোচ্য ৪নং প্রজ্ঞাপনে বিস্ময়করভাবে তাঁদেরকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়নি। অথচ একই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত প্রশাসন ক্যাডারের এরকম যথাক্রমে ৩২ ও ০৭ জনকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে (তালিকা সংযুক্ত), যা অন্যান্য কাডার থেকে আগত উপসচিবদের প্রতি চলমান বৈষম্যের সাথে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আমরা সবিনয়ে পেশ করছি যে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ইতোপূর্বে জারীকৃত প্রজ্ঞাপনসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, একই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণত বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাগণ পদোন্নতি প্রাপ্ত হন এবং পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ পদোন্নতি বিধিমালার শর্ত পূরণসাপেক্ষে পৃথক পৃথকভাবে পরবর্তী উচ্চতর ধাপে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের সাথে অন্যান্য ক্যাডারের উপসচিব হিসেবে যোগদানকৃত ১০৬ জন কর্মকর্তার মধ্যে ইতোমধ্যে ১৮ জন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের ১৭তম (৩ জন), ১৮তম (২ জন), ২১তম (৫ জন) এবং ২২তম (৮ জন) ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। এমনকি, প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের সাথে পদোন্নতি প্রাপ্ত অন্যান্য ক্যাডারের ৬৯ জন উপসচিবের মধ্যে ০২ জন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের ২২তম ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন (তালিকা সংযুক্ত)। একইভাবে, বিসিএস ১৩তম ব্যাচের কর ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের সাথে উপসচিব হিসেবে যোগদান করে, ১৭তম ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব, ১৫তম ব্যাচের সাথে অতিরিক্ত সচিব এবং ১৯/০৫/২০২৪ খ্রি. তারিখে সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। একই রীতি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের ক্ষেত্রেও চলমান রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা ২৪তম ব্যাচের সাথে উপসচিব, ২০তম ব্যাচের সাথে যুগ্মসচিব এবং ১৮তম ব্যাচের সাথে অতিরিক্ত সচিব হিসিবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়েছেন। অর্থাৎ সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাগন জুনিয়র ব্যাচের সাথে পদোন্নতি পেলেও পরবর্তীতে পদোন্নতি বিধিমালার শর্ত পূরণসাপেক্ষে উক্ত জুনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তাগণের পূর্বেই উচ্চতর ধাপে পদোন্নতি পেয়ে থাকেন, এটাই জনপ্রশাসনের দীর্ঘদিনের রীতি। অতএব, বৈষম্যের শিকার অন্যান্য ক্যাডারের যে সকল উপসচিব ইতোমধ্যে যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতির সকল শর্ত পূরণ করেছেন এবং এক বা একাধিকবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, গত ১৮/০৮/২০২৪ খ্রি. তারিখের পদোন্নতি আদেশে তাঁদেরকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁদের সাথে পুনরায় বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে তা রীতিমত অবিচারের শামিল, পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা বিষয়ক সকল আইন ও বিধিমালার লংঘন এবং বৈষম্যহীন ও মেধাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ার সরকারের গৃহীত পরিকল্পনার সাথে সাংঘর্ষিক।
এ ভাবে ক্রমাগতভাবে আমাদেরকে প্রাপ্য পদোন্নতি হতে বঞ্চিতকরণ, BCS Seniority Rules, 1983 লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠতা হরণপূর্বক জুনিয়রদের অধীনে কাজ করতে বাধ্য করার কারণে আমরা মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছি। এর মাধ্যমে ক্যাডার/শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে, যা সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
বর্ণিতাবস্থায়, সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায়, BCS Seniority Rules, 1983, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এবং Natural Justice অনুসরণপূর্বক আমাদেরকে অতি দ্রুত স্ব-স্ব নিয়মিত ব্যাচের সাথে জ্যেষ্ঠতা প্রদানপূর্বক যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি প্রদান করার জন্য মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন করছি। উল্লেখ্য, পদোন্নতি বঞ্চিত এ সকল কর্মকর্তা বেতন স্কেলের শেষ ধাপে আছেন বিধায় এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারের অতিরিক্ত কোন অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হবে না।