তদন্ত শুরু : প্রমাণ পাওয়া গেলে পরিণাম খুবই ভয়াবহ হবে

আন্তর্জাতিক

ক্ষোভ, বিক্ষোভ আর কান্নায় ইরানিরা তাদের প্রিয় নেতাকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ নামাজে জায়নাজায় যোগদিয়ে প্রমাণ করে দিলো তারা কত ভালোবাসে রাইসিকে। ইরান জুড়ে পাঁচ দিনের শোক পালন করা হচ্ছে। একদিকে পালন করা হচ্ছে শোক অন্যদিকে ক্ষোভে ফুঁসছে ইরানিরা। তাদের অনেকের দাবি এটা নিচক কোনো দুর্ঘটনা নয়। ইসরাইল এবং তার মিত্ররা এটা ঘটিয়েছে। এদিকে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ইরানসহ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘যদি রাইসির মৃত্যুর সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তবে ইরানের পক্ষ থেকে এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

জানা যায়, ইরান যখন একাধিক ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে, তখনই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মারা গেলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদুল্লাহিয়ানসহ কয়েকজন শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা।
গত রোববার আজারবাইজান সীমান্তে একটি বাঁধের উদ্বোধন করে রাইসি তেহরান ফিরছিলেন, তখনই তার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। প্রাথমিক কারণ হিসেবে বৈরী ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে এর নেপথ্যে আরও কিছু কারণ নিয়েও চলছে আলোচনা। কোন পরিস্থিতিতে এই দুর্ঘটনা হলো, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।

এর আগে বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে রাশিয়া থেকে যে প্রধান দুটো পাইপলাইনের সাহায্যে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হয় তাতে ছিদ্র হওয়ার ঘটনাকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নাশকতা বলে উল্লেখ করেছিলো। সে সময় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল এ ঘটনা।

রাশিয়া, ইউক্রেন আর ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের তোড়ের মধ্যেই ঠিক কারা এ আক্রমণ চালিয়ে থাকতে পারে, তা নিয়ে শুরু হয়েছিল ব্যাপক জল্পনা। অবশেষে সেটিও সুইডেন এবং ডেনমার্কের তদন্তেও সেটি কোনও অপরাধীর নাম ছাড়াই শেষ হয়েছিল।

এদিকে সম্প্রতি স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোকে হত্যার চেষ্টায় পাঁচবার গুলি করা হয়। স্লোভাকিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাকারী ৭১ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি একটি শপিংমলের সাবেক এক নিরাপত্তারক্ষী। ইউক্রেনে সহায়তা বন্ধ করার পরই এমন ঘটনা ঘটেছে।

অন্যদিকে ইরানের রাষ্ট্রপতি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুইজনই অদ্ভুতভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, যেখানে অন্য দুটি এসকর্ট হেলিকপ্টার নিরাপদে ফিরে আসতে পেরেছে।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র নিরাপত্তা নীতি বিশ্লেষক মাইকেল মালুফ সোমবার স্পুটনিকের দ্য ক্রিটিক্যাল আওয়ারের হোস্টকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, একইসঙ্গে তিনটি হেলিকপ্টার উড়ছিল, হঠাৎ একটি আছড়ে পড়ল। কোন কিছু ছাড়াই, কোন মোড় ছাড়াই। যদি এটি বৈরি আবহাওয়ার কারণে হয় তাহলে অন্য দুটি কীভাবে নিরাপদে ল্যান্ডিং করতে পারল? কেন প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার পারল না?

মালুফ আরও বলেন, ইরানের অভ্যন্তরে কথিত গোপন অভিযানের অনেক ইতিহাস রয়েছে ইরানের। যার মধ্যে পাইপলাইনে বোমা বিস্ফোরণ, পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা করা। এমনকি ইরানের অভ্যন্তরে থেকে ইরানের হামলার জবাব দেওয়া।

‘এটি খুব তুচ্ছ প্রতিক্রিয়া ছিল ইসরায়েলের বলে আমি মনে করি। এটি অনেক বড় কিছু করতে পারে ইসরায়েল তার আভাস দিয়েছিলো।’ বলেন মালুফ।

‘এছাড়া অন্যান্য ঘটনাগুলো যেগুলো পশ্চিমা বিশ্বে ঘটছে- যার মধ্যে স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা, বাল্টিক সাগরের নিচে গ্যাস পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া, এগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ঘটছে না। সেখানে আরও বড় কিছু হচ্ছে। আমি মনে করি, এগুলোতে কেউ নাক গলানোর চেষ্টা করছে।’ বলেন তিনি।

ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা একটি অভ্যুত্থানের ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে। এসময় তিন মার্কিনসহ ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া অভ্যুত্থানের কথিত নেতা ক্রিশ্চিয়ান মালাঙ্গা নিহত হন। মালাঙ্গা ২০১৫ সালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন বলেও জানা গেছে।

ইরান ও ইসরায়েলের ঐতিহাসিক বৈরিতার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ ইরানিদের অনেকের অনুমান, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা থাকতেও পারে।

মালুফ বলেন, ‘যদি রাইসির মৃত্যুর সঙ্গে ইসরায়েল জড়িত থাকার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় তবে ইরানের পক্ষ থেকে এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *