অনিয়ম যেখানে নিয়মিত সীমাহীন দুর্নীতি ( পর্ব-০৩)
মোঃ ওয়াজেদ আলীঃ
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অন্তরর্ভুক্ত গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোগদহ ভেলামারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সামছুল আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এসেছে।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর, ভূয়া সভাপতির স্বাক্ষর, সাবেক প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর জালসহ ভুঁয়া কাগজপত্র তৈরি করে একজন সহকারী শিক্ষক, একজন নৈশপ্রহরী, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে নিয়োগ কার্যক্রমে স্বাক্ষর জালিয়াতি আর নানা অনিয়ম প্রমানিত হওয়ায় ১ জন শিক্ষক, ১জন নৈশ্যপ্রহরী এবং ১ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর এমপিও আবেদন বাতিল করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপ্তরের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ মামুনুর রশীদ। এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল করিম সরকার ২০০৩ সালের ফেব্রæয়ারী মাসের ১০ তারিখে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষা) পদে মোছাঃ ফিরোজা বেগম কে নিয়োগ দেন। কম্পিউটার বিষয়ে সহকারী শিক্ষক চাকুরীতে থাকা অবস্থায় বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ সামছুল আলম যোগদান করার পর হইতে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অংকের অর্থ নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। ওই বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষিকা বলেন, প্রধান শিক্ষক ডিজির প্রতিনিধির স্বাক্ষর জালসহ ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ইতিমধ্যে শিক্ষক কর্মচারী সহ পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়েছেন তার মধ্যে তিনজনই জালিয়াতি ধরা পড়ে। নিয়োগ দেয়ার নামে তাদের কাছ থেকে ৭০ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন অনিয়ম, নিয়োগ বানিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানান অভিযোগ উঠে এসেছে।
এ সকল অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সামছুল আলম কোনো প্রশ্নেরই সদুত্তর দিতে পারেননি। নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা অফিসার সকল কিছু অবগত রয়েছেন। নতুন করে আপনি আর কি জানবেন? আমার আর কিছুই বলার নাই।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তিনি বলেন, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অন্তরর্ভুক্ত গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বোগদহ ভেলামারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সামছুল আলম ২০১৫ সালের জুন মাসের ০৭ তারিখে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষা) পদে মোঃ শহীদুল ইসলাম ও ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে বিদ্যালয়ে (চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী) নৈশ্যপ্রহরী পদে মোঃ মোছাদ্দার আলী এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে মোঃ সোহেল রানা কে নিয়োগ দেখিয়ে ২০২৪ সালের আগষ্ঠ মাসে এই ৩ জনের এমপিও করনের সরকারী অংশের বিলের জন্যে আবেদন করেন এই প্রধান শিক্ষক। আবেদনের পেক্ষিতে সরেজমিনে বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে খুঁজে পায় নিয়োগ কার্যক্রমে মারাত্বক অসঙ্গতি, যাচাই করে দেখি যথাযথ নিয়ম মেনে নিয়োগ দেওয়া হয় নাই। নিয়োগ দিতে গিয়ে আশ্রয় নেন জালিয়াতির। কাগজ পত্রে মিল নেই, মিল নেই রেজুলেশনেও। সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার শিক্ষা) পদে মোঃ শহীদুল ইসলামের নিয়োগে ডিজির প্রতিনিধি গাইবান্ধা সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাহানা বানুর স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ফজলে এলাহীর স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো। রেজুলেশনে সভার বিবরণীতেও রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তিকে সভাপতি বানিয়ে ও সদস্য সচিব সাবেক প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল করিম সরকারের স্বাক্ষর সহ তারিখের গড়মিল আবার কোথাও তারিখ নেই, নেই প্রকাশিত পএিকার নাম। যার কারণে তিন জনেরই আবেদন নামঞ্জুর করে দেই। পরবর্তীতে আবারও প্রধান শিক্ষক কাগজপত্র নিয়ে অফিসে আসলে তাও বাতিল করে দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।