পার্বত্য বাসিকে দেশি-বিদেশি চক্রান্ততে না জড়ানোর আহ্বান ; সাবেক সাংসদ ওয়াদুদ ভুঁইয়া

রাজনীতি

খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিনিধি :

পাহাড়কে অশান্ত করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ছক এঁকেছে হাসিনা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান সার্বিক অবস্থা বেশ উদ্বেগ ও আশঙ্কাজনক। যেকোনো সময় খাগড়াছড়ি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে ভয়াবহ দাঙ্গা সৃষ্টি করার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করতে এবং তা দাঙ্গায় রূপান্তরিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ও দেশি-বিদেশী কয়েকটি চক্র। আঞ্চলিক সংগঠনের চক্রান্তকে পুঁজি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ফায়দা লুটতে চাইছে স্বৈারাচারী হাসিনা।
আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠবার পর মুহূর্ত থেকেই পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে প্রভাবশালী সশস্ত্র একটি আঞ্চলিক গ্রুপ খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সেইসাথে আঞ্চলিক সংগঠনের এই ষড়যন্ত্রকে পুঁজি করে পৃথকভাবে ছক আঁকছে পতিত সরকারের দোসররা এবং একটি বিদেশি রাষ্ট্র। ইতোমধ্যে গত দুই সপ্তাহে আমরা দুই দফায় তাদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছি। আপাতভাবে বাইরে থেকে পাহাড়ের পরিস্থিতি শান্ত মনে হলেও ভেতরের অবস্থা গভীর সংকটাপন্ন।বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে আগামীকাল অর্থাৎ ৫ অক্টোবর শনিবার থেকে যেকোনো দিন উত্তাল করে তুলতে পারে পাহাড়। আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠি সাধারণ পাহাড়িদের জোরপূর্বক বাধ্য করে মানব ঢাল তৈরি করে বড় ধরনের গণজমায়েত করতে পারে পাহাড়ে। ধারণা করা হচ্ছে, এরপর প্রথমে স্থানীয় প্রশাসনকে অবরুদ্ধ করা হতে পারে অথবা সাম্প্রদায়িক সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ছক আঁকা হয়েছে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থাটি। সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং গোপন সতর্কতার সাথে উস্কানি দিয়ে সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করেছে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করতে কোটি কোটি টাকার ফান্ডিংও করেছে তারা। আর দেশের বাহিরে পালিয়ে থেকে এর নির্দেশনা দিচ্ছে স্বৈরাচারী হাসিনা। আমরা এর আগেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত সংবাদে জেনেছি রাতের ভোটে নির্বাচিত হাসিনা সরকারের খাগড়াছড়ি জেলার অন্যতম দোসর কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার সাথে খাগড়াছড়িতে অবস্থানরত ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি গোষ্ঠির গভীর সখ্যতা ছিল এবং ওই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠিকে তিনি রসদ সরবরাহ থেকে শুরু করে নানাভাবে পৃষ্টপোষকতা করতো এবং তাদের থেকে পাল্লায় মেপে টাকা গ্রহন করতো।
পার্বত্যবাসীর প্রতি আহ্বান,পাহাড়ের শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালি সকলকে অনুরোধ করছি, আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠি, আওয়ামী লীগ এবং বাহিরের রাষ্ট্রের পাতানো ফাঁদে আপনারা পা দেবেন না। যেকোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি শান্ত, ধীরস্থিরভাবে ধৈর্য্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। প্রতিটি এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ‘সম্প্রীতি কমিটি’ করুন। চুরি, ডাকাতি ও অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিটি হাট-বাজারে সকল সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ‘বাজার রক্ষা কমিটি’ করুন। পৃথক পৃথক টিম করে রোটেশান অনুযায়ী নিজেদের জান ও মাল নিজেরাই পাহাড়া দিন। দুস্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে তাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে সোপর্দ করুন। সর্বোপরি উগ্রতা পরিহার করে দেশের শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় পাহাড়ি-বাঙালি সকলে বিনয়ী এবং মানবিক হোন।
দেশবাসীর কাছে আহবান,পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান বাংলাদেশের দশভাগের একভাগ ভূ-খন্ড নিয়ে গঠিত। এই তিনটি জেলা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। যে ষড়যন্ত্র পাহাড় এবং পাহাড়ের মানুষকে নিয়ে শুরু হয়েছে তা নিয়ে সমতলের অন্য ৬১ জেলা অর্থাৎ সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া জরুরী। যার যার জায়গা থেকে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম রক্ষায় আপনাদেরও কথা বলা প্রয়োজন। পাহাড়ে বসবাসরত শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালি সকলের জান-মাল রক্ষায় আপনাদেরও সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন আমাদের। আঞ্চলিক ও দেশি-বিদেশী এই চক্রান্ত রুখতে সারাদেশের সকল মানুষ এখনই সমস্বরে আওয়াজ তোলা জরুরী।
প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহ্বান,পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় এখনই সরকারকে তৎপর হতে হবে। দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া না হলে যে পরিস্থিতির আশঙ্কা আমরা করছি তা মোকাবেলা করা প্রশাসন তথা সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এবং এর জন্য বাংলাদেশের একদশমাংশ অঞ্চল অর্থাৎ পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে পড়বে সরকার। একইসাথে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখেও পড়তে হতে পারে অর্ন্তবর্তীকালীন এই বাংলাদেশ সরকারকে। পাহাড়ে আরও বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলোকে সক্রিয় করা ছাড়া আপাতত আর কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করছিনা। শীঘ্রই পার্বত্য তিন জেলায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর আরও জনবল এবং কার্যকরী ভূমিকা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি আমরা। একইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া হত্যা ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জোর দাবী রইলো আমাদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *