বিশ্বব্যাপী ইউরিক অ্যাসিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর আমাদের দেহে যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়, তখন তা জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল হিসেবে জমতে শুরু করে। তখন গাঁটে গাঁটে অসহ্য ব্যথা শুরু হয়। এমনকি অনেকের জয়েন্টও ফুলে ওঠে।ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন অনুসারে, ইউরিক অ্যাসিডের সাধারণ পরিসর হলো পুরুষদের জন্য ৩.৪ থেকে ৭ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার এবং মহিলাদের জন্য ২.৪ থেকে ৬ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটার, তবে এটি ৩.৫ থেকে ৭.২ পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কিছু পিউরিন যুক্ত খাবার থাকে, যা আমাদের শরীরে পৌঁছে দেহে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে।পিউরিন যুক্ত খাবার : মাংস এবং মাংস সুপ, কলিজা, মগজ, কিডনি, গুর্দা, মাছের ডিম, ইস্ট, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, শুঁটকি মাছ, বেগুন, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মাছ, মাসরুম, ছোলা, মুসুর ডাল, মটরশুঁটি।
জেনে নিন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করণীয় :পিউরিন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা: কিছু খাবারে পিউরিনের পরিমাণ বেশি থাকে, এটি এমন একটি যৌগ যা শরীরে ভেঙে ইউরিক অ্যাসিডে পরিণত হয়। যখন আমরা এ ধরনের খাবার কম খাই, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। সাধারণ পিউরিন-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে অর্গান মিট, রেড মিট, শেলফিশ এবং নির্দিষ্ট ধরনের মাছ। এসবের পরিবর্তে শাকসবজি, ফল এবং দানাশস্য খাওয়ার দিকে মনোনিবেশ করুন। এর মানে এই নয় যে প্রোটিনকে সম্পূর্ণভাবে ছেটে ফেলতে হবে। উদ্ভিদভিত্তিক প্রোটিন যেমন লেবু এবং বাদাম চমৎকার বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
পানি পান করুন: ইউরিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। কেননা, এই পানির মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড মূত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে। ফলে ব্যথা, ফোলা কমতে সময় লাগবে না। এ কারণেই একজন ব্যক্তিকে দৈনিক ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
কফি পান করুন: কফি প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে। একই সঙ্গে বেশ কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেরও খোঁজ মেলে এ পানীয়তে। আর ক্যাফেইন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের যুগলবন্দিতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকতে বাধ্য় হয়। তাই আপনি নিয়ম করে দুই কাপ কফি পান করুন।ভিটামিন সি যুক্ত খাবার: প্রতিদিন ভিটামিন সিযুক্ত খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মতো সমস্যাকে হেলায় হারিয়ে দেয়া সম্ভব। আপেল, পেয়ারা, আমলকী ইত্যাদি ফলও ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখুন: আমাদের শরীর ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ইনসুলিনের মাত্রা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ ইনসুলিনের মাত্রা ইউরিক অ্যাসিড ধারণে বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যা গাউটের মতো অবস্থার কারণ হতে পারে। দানাশস্য, শাকসবজি এবং চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন যা শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।