সুন্দর নিরিবিলি গাছ-গাছালীর মোহনীয় প্রকৃতির নয়নাভিরাম বীরগঞ্জের সিংড়া ফরেস্ট। যা দর্শনাথী, পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। সিংড়া ফরেস্ট এ জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পর্যটকদের আকর্ষণীয় চিত্তবিনোদনের জন্য “সিংড়া জাতীয় উদ্যান” করা হলেও পর্যটকদের জন্য বাড়েনি সুযোগ-সুবিধাসহ দর্শনীয় করতে। বরং প্রায় এক বছর ধরে সিংড়া ফরেস্টের প্রবেশ পথে ভেঙে পড়ে আছে একটি কালভার্ট। দেখার কেউ নেই। কর্মকর্তাদেরও দেখা যায় না। একারণে দর্শনার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে জাতীয় উদ্যানটি।
অন্যদিকে বনের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদীর উপর দৃষ্টিনন্দন সেতুর সৌন্দর্যহীন দশা। সেতুর অনেক রেলিং হারিয়ে গেছে। অপরদিকে বয়ে চলা নর্ত নদীকে সজীব রাখতে খনন হলেও এর দু’পার্শে নদীর বালুতে উচু ঢিবি হয়ে আগোছোলা অবস্থায় রয়েছে। শালবনের ভিতরে পর্যটকদের জন্য নেই নিরাপত্তা কিংবা উন্নতমানের বিশ্রামাগার। তবে যে কয়টি বিশ্রামাগার রয়েছে সংখ্যায় হাতে গোনা। নিরাপত্তা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশনসহ দর্শনার্থীদের সুযোগ-সুবিধা কম। অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। একারণে দিনদিন কমতে কমতে দর্শনার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে।
অথচ রাবার ড্যামের মাধ্যেমে বয়ে চলা নর্ত নদীকে বারোমাস সজীব রাখা, নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশু পার্ক তৈরি, সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ করা হলেই দর্শনার্থী বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। দর্শনার্থী বাড়লে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি সিংড়া শালবন হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এমনটাই বললেন বনে আসা আব্দুর রাজ্জাক, ফরহাদ হোসেন, লালুসহ কয়েকজন স্থানীয় পর্যটক।
একসময়ে বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণের অভায়রণ্য ছিল গহীন অরণ্য সিংড়া ফরেস্ট। যদিও এখন আর সেই বাঘ, নীল গাই নাই। কোন পর্যটক যদি বনভোজন উৎসব করতে চায় আসতে হবে শীতকালে। অন্য সময়েও অনেকে আসেন। যদি বনের সবুজময় ভরা যৌবন ও নদীর উচ্চলতা দেখতে চাইলে আসতে হবে বর্ষাকালে। সারি সারি আকাশ ছোঁয়া দীর্ঘ সুউচ্চ শাল গাছের সবুজ আচ্ছাদন পর্যটকদের দূর থেকে যেন হাতছানি দিয়ে যায়। বনের মধ্য দিয়ে একাকী হাঁটতে হাঁটতে হয়ত মনে পড়তে পারে পুরনো দিনের গান। বনে প্রবেশেই শোনা যাবে পাখির কিচিরমিচির শব্দ। দেখা যাবে তিলা ঘুঘু, রাজঘুঘু, কাঠঠোকরা, বুলবুলি, হাঁড়িচাচা পাখি, শকুনসহ অনেক পাখি।
দিনাজপুর শহর থেকে সড়ক পথে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দুরত্ব ৪ কিলোমিটার। দিনাজপুর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়ক পথে আসা যায়।
বীরগঞ্জ সিংড়া জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা গয়া প্রাসাদ জানান, জাতীয় উদ্যানের প্রবেশ পথের কালভার্টটি গত বছরের সেপ্টস্বর মাসের দিকে ভেঙে গেছে। এটি নির্মাণের বিষয় জানানো হয়েছে এবং শিগগিরই হবে বলে আশা করছি।
উল্লেখ্য, গত ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউপির ৮৫৫.৫০একর ভূমির উপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। বিলুপ্ত প্রায় শকুনকে রক্ষা ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় ২০১২ সালে উত্তরবঙ্গে একমাত্র শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রটি এই সিংড়া ফরেস্টে স্থাপন করা হয়েছে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য রয়েছে ছোট রেস্ট হাউজ। দুটি পিকনিক স্পট।