বৈষম্যহীন মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে ১০ দফা

জাতীয়

জাতিসংঘের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণা টিমের সাবেক প্রধান এবং জাপানের এশিয়ান গ্রোথ ইন্সটিটিউটের ভিজিটিং প্রফেসর বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম একটি বৈষম্যহীন, মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের অভিপ্রায়ে তাঁর দীর্ঘ গবেষণামূলক ১০ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেছেন।

২৪ আগস্ট শনিবার নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে একটি মিলনায়তনে প্রগ্রেসিভ ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মর্তুজা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতখানি কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে ৫ আগস্টের বিজয়কে নেহায়েত ক্ষমতার হাতবদলের উপায় হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিগত সরকারের অপকর্মকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে লঘু এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাকে অস্বীকার করার সচেতন একটি প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।

গোলাম মর্তুজা উল্লেখ করেন, প্রতিক্রিয়াশিল সাম্প্রদায়িক শক্তিসমূহ পরিস্থিতির সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রগ্রেসিভ ফোরাম এমন আলোচনার মধ্যদিয়ে তরুণ ছাত্র-সমাজের আত্মত্যাগের সফল একটি পরিসমাপ্তি দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন আলোচকরা।

 

সেমিনারের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ড. নজরুল ইসলাম। এগুলো হচ্ছে : (১)অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস; (২) সুশাসন অর্জন; (৩) গণতন্ত্রের মানোন্নয়ন ও আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন; (৪) পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা; (৫) গ্রাম পরিষদ গঠন; (৬) ভৌগোলিক বৈষম্যের অবসান; (৭) সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি; (৮) নারী, শিশু, তরুণ ও বৃদ্ধদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ প্রদান; (৯) সার্বজনীন সামরিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং (১০) সার্বভৌমত্ব শক্তিশালীকরণ ও নিরপেক্ষ বৈদেশিক নীতির অনুসরণ।

ড. নজরুল তাঁর ১০ দফা পরিকল্পনা/ কমসূচির ওপর বিস্তারিত আলোচনাকালে উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যে চূড়ান্ত পরিণতি ৫ আগস্ট হলো তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ১০ দফা কর্মসূচির প্রাসঙ্গিকতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কারণ হচ্ছে. আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র দিয়েই শুরু করতে পারি। সেখানে লেখা আছে সাম্য. মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছে। সেজন্যেই এখন বৈষম্য বিরোধী বলা হচ্ছে, সেটি কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের শুরুতেই উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তার পরের ৫০/৫২ বছরে বাংলাদেশ যেদিকে এগিয়েছে তাতে কিন্তু সেই সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সামাজিক ন্যায় বিচার কতটা হয়েছে সেটিও বলা কঠিন। সেজন্যেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে এই সামাজিক আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে। আন্দোলনটি কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হিসেবে অভিহিত হয়েছে এবং তার মধ্যদিয়েই অনেক বেশী ছাত্র-জনতার সম্পৃক্ততা ঘটেছে।

গোটাবিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণার আলোকে বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ বলতে কী বুঝায়, এর অর্থনীতি কি, এটার সমাজ কি, রাজনীতি কি-সে ব্যাপারে কিন্তু স্পষ্ট কোন বক্তব্য নেই। এখন আলোচনা হচ্ছে। বিভিন্ন জনে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। হয়তো আমরা আশা করতে পারি যে এই আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়েই জিনিসটা কিছুটা পরিণতি পেতে পারে। তবে সেটা কতটা পাবে, এবং পরবর্তীতে তা কী ধরনের ঘটনাবলি দ্বারা পরিচালিত হবে, এই সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায় বিচারের লক্ষ্যটা অর্জিত হবে কিনা সেটিও এখোন পর্যন্ত অনিশ্চিত। মোট কথা হচ্ছে এই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে যে করণীয় সেটাও কিন্তু স্পষ্ট নেই।

ড. নজরুল বলেন, আমার কাছে এটা খুশির বিষয়, যে করণীয়গুলো আমি অনেক আগেই বিকশিত করেছিলাম বা ফর্মুলেট করেছিলাম, সেগুলোও কিন্তু এই বৈষম্যবিরোধী সমাজের যে আকাঙ্খা তা পূরণের জন্য খুবই উপযোগী। কারণ এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন করণীয় নির্ধারিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সেই শূন্যতা পূরণের জন্য আজকের এই আলোচনাটি এবং বক্তব্যগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করছি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হাফিজুল হক এবং আলোচনায় আরো অংশ নেন ফোরামের উপদেষ্টা নাসিমুন্নাহার নিনি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *