ছাত্র আন্দলনের চাপে পরে দেশ ছারলেন হাসিনা; ছাত্র জনতার বাধভাঙ্গা উল্লাস

জাতীয়

বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। গতকাল ৫ আগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছাড়েন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ও দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এর সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটল আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কাছে পরাজয়ের পর ২০০৯ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে সব মিলিয়ে পরপর চারবার সরকার গঠন করে দলটি। যদিও ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনই ছিল ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ।

এর আগে ১৯৯৬ সালের জুনে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় ছিল দলটি। এরপর ওই বছরে বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে সাময়িক বিলোপ ঘটে আওয়ামী লীগের। ওই বছরের ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবার নিহত হলে দুই দশকের জন্য ক্ষমতার বাইরে চলে যায় শেখ পরিবার। সে সময় দেশের বাইরে ছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশে বহুদলীয় রাজনীতি চালু করে দেয়া হলে আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। এরপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে দলটির হাল ধরেন শেখ হাসিনা। এর প্রায় ৪৩ বছর পর গণ-অভ্যুত্থানের মুখে সেই আগস্টেই দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছিলেন। যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে অসমর্থিত একটি সূত্রের বরাত দিয়ে কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার দাবি করেছে, তার এ আবেদনে সাড়া দেয়নি যুক্তরাজ্য সরকার। সেক্ষেত্রে তাকে পরবর্তী গন্তব্য ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত ভারতেই কোনো ‘সেফ হাউজে’ নিরাপদে সুরক্ষিত রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গতকাল ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আহ্বান করা হয়েছিল। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মধ্যেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ঢুকতে থাকে ঢাকায়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল বেলা ১১টায় সমাবেশ করার কথা ছিল ছাত্র-জনতার। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার কারণে তারা নির্ধারিত সময়ে সমাবেশস্থলে যেতে পারেননি। আশপাশের গলিতে অবস্থান নেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চানখাঁরপুল ও নিউমার্কেট এলাকায় পুলিশের মারমুখী আচরণ তীব্র হতে থাকে। তারা টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। মাঝে মাঝে গুলিও ছুড়ছিল। জবাবে ইটপাটকেল ছোড়ে ছাত্র-জনতা। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনে ও নিউমার্কেট এলাকায় অলিগলিতে চলে সংঘর্ষ। এ সময় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে বিজিবি সদস্যদের বাস ও ট্রাকে করে নিয়ে আসতে দেখা যায়। কিন্তু বেলা ১টার পর পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। হঠাৎ শাহবাগে কিছু শিক্ষার্থী অবস্থান নেন এবং সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা দেয়। এ সময় পুলিশ কিছুটা পিছিয়ে যায়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের সব অলিগলি থেকে মিছিল আসতে থাকে শাহবাগে। পিছিয়ে যেতে থাকে পুলিশ। একপর্যায়ে শহীদ মিনার এলাকা থেকে পুলিশ ধাওয়া খেয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে ঢুকে পড়ে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়েই অধিকাংশ মিছিল শাহবাগে প্রবেশ করে।

এর মধ্যে খবর আসে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তখন উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে শাহবাগ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বের হয় বিজয় মিছিল। সব মিছিলের গন্তব্য হয়ে ওঠে শাহবাগ। পরে শাহবাগ থেকে লাখ লাখ মানুষের মিছিল রওনা দেয় সংসদ ভবন ও গণভবন অভিমুখে।

গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দেশ ছাড়ার পরই সংসদ ভবনে প্রবেশ করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা। সংসদ ভবনের ফটক বন্ধ থাকলেও তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। মানুষ তা ভেঙে সংসদ ভবন এলাকায় ঢুকে পড়ে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করে ছিঁড়ে ফেলে বিভিন্ন নথি।

একই সময়ে মানুষের ঢল নামে গণভবনের দিকে। গণভবনের দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে তারা। ধাক্কাধাক্কি করে ঢুকতে গিয়ে অনেকে ছোটখাটো আঘাতও পান। এ সময় গণভবনে ব্যাপক লুটপাটের ঘটনাও ঘটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *