জোড়া খুনের আলোচিত ঘটনায় পুলিশের যৌথ অভিযানে ছয়জন গ্রেফতার

অপরাধ

মাসুদ রানা স্টাফ রিপোর্টার:

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে আওয়ামীলীগের দুই নেতা খুনের ঘটনায় ৫২ জনকে আসামী করে মামরা দায়ের করেছেন নিহত জেলা পরিষদ সদস্য এবং নয়লাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম।

শুক্রবার রাতে তিনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামী করা হয় নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি  আশরাফুল হক কে।

শিবগঞ্জ  থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী আশরাফুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আম্বিয়া এবং ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো.আশরাফুল হক কে  গ্রেপ্তার করেছে। জোড়া খুনের আলোচিত ঘটনায় পুলিশের যৌথ অভিযানে আরও চার জন গ্রেপ্তার হয়েছে। সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে   শিবগঞ্জ  থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামী আশরাফুল হকের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আম্বিয়া এবং ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মো.আশরাফুল হক কে  গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয় জনে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- শিবগঞ্জ থানার হরিনগর-স্কুলপাড়া গ্রামের আখতারুজ্জামান ওরফে ফুটু হুজুরের ছেলে উসমান আলী (২১), নামো-সুন্দরপুর গ্রামের মো. আবুল হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ বাবুল ওরফে বাবু ঝাপড়া (৪৫), একই এলাকার মৃত কাবির ঝাপড়ার ছেলে মো. রুহুল আমিন ঝাপড়া (৪৫) এবং মোহাম্মদ তাবজুর হোসেনের ছেলে মো. আব্দুল মান্নান (৪২)।

শিবগঞ্জ থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন জানান,চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার মোঃ ছাইদুল হাসান, বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশক্রমে ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, এর নেতৃত্বে এবং গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার-ফোর্স ও শিবগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনার পর থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলার শিবগঞ্জের নয়ালাভাঙ্গা ও নাচোল উপজেলার ফতেপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বাবুল ঝাপড়া ও রুহুল আমীন ঝাপড়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত ০১ জন আসামি ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।এর আগে শুক্রবার (২৮ জুন) এজাহার নামীয় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রসঙ্গত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সালাম এবং আব্দুল মতিন নামে এক শিক্ষককে গুলি ও বোমা হামলা করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত বৃহস্পতিবার ২৭জুন রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার রানীহাটি কলেজের সামনে তাদের ওপর গুলি ও ককটেল হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। নিহত আব্দুস সালাম  শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অপরজন রানিহাটি-ফতেপুরের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে শিক্ষক মতিন আলী।রানীহাটি কলেজের সামনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছে বসে ছিলেন আব্দুস সালামসহ তার সঙ্গীরা। হঠাৎ দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। তাদের ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আব্দুস সালাম। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মতিন আলীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মিম ইফতেখার জাহান বলেন, রাত ৯টার দিকে মতিন আলীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তার মাথা ও পায়ে গুলি লেগেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের গত ২৪ মার্চ রাত ১১ টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের চৌধুরী মোড়ে জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালামের প্রাইভেটকারে ককটেল হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এতে আব্দুস সালাম প্রাণে বেঁচে গেলেও তার গাড়িচালক আব্দুর রহিম ও জেলা পরিষদের অ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ আহত হন।

হত্যার ঘটনায় আব্দুস সালামের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বাদী হয়ে ৫২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান শিবগঞ্জ থানার ওসি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *