ব্যবসায়ীরা স্বল্পমেয়াদি ঋণে আগ্রহী হলেও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণে তাদের তেমন আগ্রহ নেই
বিনিময় হারের ঝুঁকিসহ নানা কারণে ব্যবসায়ীরা মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে ডলার ঋণ করতে কম উৎসাহী হলেও স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ানোয় তিন মাসে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণ সামগ্রিকভাবে ২৭৫ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে।
প্রায় দেড় বছর ধরে কমার ধারায় থাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ জুন প্রান্তিকে বেড়েছে। ২০২২ সাল শেষে এর বকেয়া ছিল ১৬.৪২ বিলিয়ন ডলার, যা চলতি বছরের জুন মাস শেষে ১১.৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। মার্চ প্রান্তিকে এর বকেয়া ছিল ১১.০৪ বিলিয়ন ডলার।একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ব্যাংকগুলো এখন আগের তুলনায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের এক্সপোজার কমিয়ে আনছে।‘এ ছাড়া গ্রাহকদের মধ্যেও বিদেশি ঋণ নেওয়ায় একটা দ্বিধা কাজ করছে। এসব কারণে মধ্যমেয়াদে আমরা এই ঋণ কমতে দেখছি,’ বলেন তিনি।জুন প্রান্তিকে বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ কেন বেড়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনীতি দিন দিন বড় হচ্ছে। অর্থনীতি যত বড় হবে, সেই সঙ্গে ডলার ঋণও বাড়বে। আমাদের বিনিময় হার এখনো স্থির হয়নি। ফলে এখন যারা বায়ার্স ক্রেডিট বা অন্য মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নিচ্ছে, তারা আগামী ৫-৬ মাসের বিনিময় হার ধারণা ঋণ নিয়েছে।’
এ ছাড়া ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র (এলসি) খোলাও কিছুটা বেড়েছে বলে জানান তিনি। ‘ফলে গত তিন মাসে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বেড়েছে।’কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ায়, যা দেশের ইতিহাসে এক দিনে টাকার সর্বোচ্চ অবমূল্যায়ন। এরপর থেকে ডলারের বাজারে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসার ইঙ্গিত দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে ডলারের দাম কেমন হবে, তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারদের মধ্যে শঙ্কা রয়ে গেছে।সর্বশেষ আগস্টে ডলারের দাম আরও ৩ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একটি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, গত দুই বছরে টাকার মান প্রায় ৩৫ শতাংশ কমেছে। ‘অর্থাৎ ডলারে ঋণ পরিশোধের জন্য একজন গ্রাহককে অনেক বেশি পেমেন্ট করতে হয়েছে। হয়তো তিনি যখন লোন নিয়েছিল তখন ৮৫ টাকার বিনিময়ে ডলার পাওয়া যেত, অথচ পেমেন্ট করতে গিয়ে দেখেছে ডলারের রেট ১১০ টাকায় উঠে গেছে,’ বলেন তিনি।
ভবিষ্যতে ডলারের দাম ওঠানামা করার এ শঙ্কাও মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করছে বলে মন্তব্য করেন ওই ব্যাংকার।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন বলেন, ‘গত দুই বছরে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যে পতন হয়েছে, তার একটি কারণ স্বল্পমেয়াদি কমে যাওয়া। তবে এখন সে চাপ ধীরে ধীরে কমছে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন সময়ও দেখেছি যখন প্রতি মাসে ব্যবসায়ীরা ৭০০-৮০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করেছেন। সে হিসাবে বেসরকারি খাতের সার্বিক বিদেশি ঋণ ২৭৫ বিদেশি মিলিয়ন ডলার বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত ৪ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২০.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের একই দিনে এই রিজার্ভ ছিল ২৫.৬২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশের রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি কমে গেছে।