গোলাম সারওয়ার সজলঃ
ঢাকার সাভারে কারখানা দখলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নাশকতা মামলার আসামির তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে হুমকির ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা।
বক্তারা এ সময় হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বেলা ১১টার দিকে সাভার প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। আহত সাংবাদিক হলেন ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল নাগরিক টেলিভিশনের সাভার প্রতিনিধি আকলাকুর রহমান আকাশ এবং হুমকির শিকার সাংবাদিক হলেন দৈনিক দেশ রূপান্তর ও ডেইলি অবারজারভারের সাভার প্রতিনিধি মো. ওমর ফারুক।সাভার পৌরসভার ভাগলপুর এলাকায় গত সোমবার (২৬ মে) একটি সিরামিক কারখানায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন সাংবাদিক আকলাকুর রহমান আকাশ। এর আগে গত ২১ মে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকায় একটি তৈরী পোশাক কারখানার অভ্যন্তরে জামায়াত নেতার অবস্থান ও কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে তথ্য জানতে চাইলে সাংবাদিক ওমর ফারুককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও পুলিশে দেয়াসহ বিভিন্ন হুমকি দেয় কারখানা মালিক।মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা আজ হুমকির মুখে। দেশে সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহ করতে নানান সময়ে পরিকল্পিত হামলার শিকার হচ্ছেন। এতে সমাজের নানান অসংগতি তুলে ধরা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি না হলে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলে দুর্বৃত্তরা নতুন করে অপরাধ করতে ভয় পাবে। পুলিশ বিভাগকে সঠিক তদন্ত করে প্রত্যেক অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে হবে।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ আচার্য্য বলেন, আমরা এর আগেও দেখেছি আমাদের অনেক সাংবাদিকের উপর বিভিন্ন মামলা-হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বেঙ্গল সিরামিক কারখানার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে কারখানার ভেতর গন্ডগোলের খবর সংগ্রহ করতে গেলে আমাদের সহকর্মী আকাশের উপর হামলা চালিয়ে তাঁকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। আমরা সাংবাদিকরা তো কারখানার মালিক হতে চাইনা আমরা গিয়েছি তথ্য সংগ্রহ করতে এরজন্য কি আমাদের মার খেতে হবে? অন্যদিকে আমাদের আরেক সহকর্মী ওমর ফারুক এক জামায়াত নেতার তথ্য জানতে চাওয়ায় এক কারখানা মালিক তাঁকে গালাগাল ও পুলিশে দেয়ার হুমকি দিয়েছি। তথ্য চাওয়াটা কি অপরাধ? আমরা কি অপরাধী? আমি এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাচ্ছি।প্রেসক্লাবের সভাপতি নাজমুস সাকিব বলেন, আমরা সাংবাদিকরা তো অপরাধী না। আমরা একটি অপরাধ সংগঠিত হলে সেখানে নিউজের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে যাবো এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেখানে গিয়েও যদি আমাদের হামলা ও হুমকির শিকার হতে হয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়? আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবী জানাই। যদি দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় না আনা হয় তাহিলে আমরা আরো কঠোর আন্দোলনে যাবো।উল্লেখ্য, গত সোমবার (২৬ মে) সাভারের ভাগলপুর এলাকায় বেঙ্গল ফাইন সিরামিক লিমিটেড নামের একটি সিরামিক কারখানা দখলের অভিযোগ পেয়ে সেখানে তথ্য সংগ্রহে গিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করছিলেন সাংবাদিক আকাশ এ সময় সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক তাঁকে মারধর করেন এবং মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে তার সহকর্মীরা এসে আহত ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।অন্যদিকে গত ২১ মে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের রাজফুলবাড়ীয়া এলাকায় একেএইচ নিটিং এন্ড ডায়িং নামে একটি তৈরী পোশাক কারখানার কর্মকর্তা বিস্ফোরক দ্রব্য ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী আবুল বাশারের বিরুদ্ধে কারখানাটির ভিতরে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তার নিজ বাসভবনে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন হাসান মন্ডল স্থানীয় এক বাসিন্দা।এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য কারখানাটির সামনে গেলে কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক রাফি সাংবাদিকদের সাথে অসদাচরণ ও দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থপনা পরিচালক মো. আবুল কাশেমের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনিও সাংবাদিক ওমর ফারুককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেন এবং নিজেকে ক্ষমতাবান দাবি করে থানার ওসির কাছ থেকে তার সম্পর্কে জেনে নিতে বলেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক সাভার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে