চট্টগ্রামের রাউজানের কৃষকরা দিন দিন ঝুঁকছে নতুন নতুন ফসল উৎপাদনের দিকে। এবার কৃষক পরিবারের শিক্ষিত যুবকরা মনোযোগি হয়েছে কফি ও কাজুবাদাম চাষের দিকে। ইতিপূর্বে এই উপজেলায় কৃষকরা শরিষা, সূর্যমুখি, কেপসিকামসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদন করে ভাল উৎপাদন পেয়েছে। এমনই তথ্য জানান কৃষকরা।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে কফি ও কাজুবাদাম চাষাবাদ সম্পর্কে জানা গেছে, ২০০১ সালে খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ‘জার্মপ্লাজম সেন্টার’ কফি নিয়ে গবেষণা শুরু করে। দীর্ঘ গবেষণার পর ২০২৩ সালে বারি কফি-১ নামে প্রথম কফির জাত অবমুক্ত করা হয়। বারি কফি-১ দেশের প্রথম কফির জাত। এই কেন্দ্রের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল কফির মধ্যে এটি অন্যতম। এ জাতের কফির গাছ থেকে প্রতিবছরই ফল পাওয়া যায়। গবেষকদের মতে বারি-১ কফি দেশের সর্বত্র চাষাবাদের উপযোগী। খাগড়াছড়ির গবেষণা কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কফির জাত এখন ৪২টি প্লট প্রদর্শনীর মাধ্যমে আবাদ হয়েছে। সেখানে ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে। এ জাতের প্রতি গাছ থেকে আট কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। চাষ করা যায় ছায়াযুক্ত টিলাভূমিতেও।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর গবেষকদের মতে, বারি কফি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চারটি মেশিন উদ্ভাবন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কফি পালপার, কফি ডিহলার, কফি ভেন্ডার এবং কফি রোস্টার। এসব মেশিন দিয়ে মানসম্মত কফি উৎপাদন করা যায়।
উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে থাকা কৃষি কর্মকর্তরা জানান, কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা দিয়ে চাষাবাদে উৎসাহ বাড়ানো হচ্ছে। এখন কৃষিকাজে আগ্রহী বাড়ছে শিক্ষিত যুবক শ্রেণির মাঝেও। বেশি ভাগ তরুন শিক্ষিত শ্রেণির কৃষকরা চান নতুন নতুন জাতে ফল ফুলের বাগান করে লাভবান হচ্ছে। এই শ্রেণির কৃষকরা এবার নেমেছে কফি ও কাজুবাদামের মত দামি ফসল উৎপাদনে।
প্রবীণ কৃষকরা জানান, কৃষি উৎপাদনসহায়ক উপকরণের চড়া দাম, কৃষি শ্রমিকের উচ্চ মুজরী দিয়ে চাষাবাদে নেমে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে গিয়ে অনেকেই বোরো চাষাবাদ এক রকম ছেড়েই দিয়েছেন। বোরোর পরিবর্তে কেউ মৌসুমী চাষ করে কোনো মতে সংসার চালাচ্ছেন। অবশ্য গত কয়েক বছর থেকে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষি কাজে নতুন যন্ত্রপাতি, উন্নত জাতের বীজ পেয়ে হাত পা গুটিয়ে বসা কৃষকরা আবার মাঠে নেমেছে বলে তারা জানায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম কবির জানান, রাউজানের মাটি বিভিন্ন জাতের ফসল ফলানো বেশ উপযোগি। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে পাহাড় পাদদেশে রয়েছে হলদিয়া, ডাবুয়া, রাউজান, কদলপুর ও পাহাড়তলী ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে দুইবছর থেকে কফি বাগান রয়েছে ২০টি, কাজুবাদামের বাগান আছে ২৫টি। এছাড়া গত কয়েক বছরে এ উপজেলার কৃষকরা ভুট্টো, সূর্যমুখি, শরিষা, কেপসিকাম খেত ও মালটার বাগান করে বেশ লাভবান হয়েছে।