রংপুরের মিঠাপুকুরে বন্যার্তদের জন্য টাকা তুলতে বাধা, ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা

অন্যান্য সারা বাংলা

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নের জামায়াত সমর্থিত চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।

 

শনিবার (৩১ আগস্ট) রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভাংনী ইউপি চেয়ারম্যানের ভাতিজা ফাহিম মুনতাসীর ওয়াহেদী বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতার নামে নগদ টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাতের চেষ্টা করা হলে চেয়ারম্যান তাতে বাধা দেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত আমলা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (পার-২ শাখা) আবু রায়হান দোলনের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ভাংনী ইউনিয়নে বন্যার্তদের সাহায্যের নামে আল মা আরিজ যুব সংগঠনের ব্যানারে নগদ প্রায় ২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কাগজীপাড়া গ্রামের  মোতাকাব্বের হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। কালেকশনের টাকা বন্যার্তদের সহযোগিতায় না পাঠিয়ে টালবাহানার কারণে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব লাগে। বিষয়টি জানাজানি হলে ইউপি চেয়ারম্যান ওই টাকা বন্যার্তদের সহযোগিতায় সরকারি ফান্ডে পাঠাতে বলেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ভাংনী ইউনিয়নের কাগজীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দোলনের ইন্ধনে মোতাকাব্বের হোসেন, রিয়াল মিয়া, নাঈম মিয়া,মোরছালিন মিয়া, এনামুল হক হলুদ, তাজমুল হোসেন, রুকু মিয়া, কোরবান আলী, মানিক মিয়া, হাছিব মিয়া, সজিব মিয়া, লাকাদ মিয়া, সাকিব মিয়া, হামিম মিয়া, গোলাম রব্বানি, সিয়াম মিয়া, মোত্তাকিন মিয়া, রেদোয়ান মিয়া, রোম্মান মিয়া, শহীদ মিয়া, রাতুল মিয়া, শয়ন মিয়া, রাফিন, হাফিজার রহমানসহ অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জন লাঠি, লোহার রড ও দা নিয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় তার বাড়িতে অবস্থিত হোমিওপ্যাথিক ফার্মেসিতে প্রবেশ করে তারা দরজা, টেলিভিশন, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করে আনুমানিক ৩৯ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন ও ক্যাশ টেবিলের ড্রয়ার থেকে ৮৬ হাজার টাকা নিয়ে যান। এছাড়া যাওয়ার সময় দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্য হত্যা করার হুমকি দেন তারা।

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার পর পুলিশ এলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিদর্শত (এসআই) আলতাবের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, শনিবার দিনগত রাত ১টায় পুলিশের দুইটি গাড়ি এলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই আলতাব কোনো ব্যবস্থা নেননি। উলটো দুষ্কৃতকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের তিনি ছাত্র সমন্বয়ক আখ্যা দিয়ে বলেন, ছাত্ররা শিক্ষকদের কতকিছু করছে। তার কোনো বিচার নেই। চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা তো সামান্য ঘটনা। আগামীকাল (রোববার) থানায় আসেন। মীমাংসা করে দেওয়া হবে। পুলিশ অফিসারের এমন মন্তব্যে বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

এর আগেও বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের হয়রানি ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ একাধিক অভিযোগ আছে এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ভাংনী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মোতাকাব্বেরের ছেলে নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার বিষয়টা পুঁজি করে মাঝেমধ্যেই বিধবা ভাতাসহ সমাজকল্যাণ বিভাগের বিভিন্ন কাজ নিয়ে আমার কাছে তদবির করতে আসেন। আমি কোনো তদবিরকারীকে প্রশ্রয় না দেওয়ায় আগে থেকেই তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সর্বশেষ শনিবার নিবন্ধনহীন সংগঠনের নামে বন্যার্তদের সহযোগিতার অজুহাতে সংগ্রহ করা নগদ অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানতে পেরে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকারি ফান্ডে জমা দিতে বলি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আমার অনুপস্থিতিতে তারা বসতবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান শিমুল জানান, এক বছর হয়নি আমাদের জামায়াত সমর্থিত পায়রাবন্দ ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সে হত্যার রহস্য আজও উদ্‌ঘাটন হয়নি। আবারও আমাদের উপজেলার আরেক ইউপি চেয়ারম্যানকে হত্যার উদ্দেশ্যে বসতবাড়িতে হামলা চালানো হলো। আমরা বড় কোনো দুর্ঘটনার আগেই এ অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মিঠাপুকুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *