মেসির চোখের জল মুছল ট্রফির স্পর্শে কলম্বিয়াকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার কোপা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

ফুটবল

ফোলা গোড়ালিতে বরফের ব্যান্ডেজ বেঁধে মেসির আকুল কান্না পুরোনো স্মৃতির ঝাঁপিই কি খুলে দিয়েছিল তাঁর সামনে? ১০ বছর আগে এমনই এক জুলাইয়ে মারাকানায় বিশ্বকাপ হাতছাড়া হওয়া কিংবা তারও দু’বছর পর নিউজার্সিতে কোপার ফাইনালে পেনাল্টি মিস হওয়া। একটা বিপন্ন বিস্ময় কি তাঁকে এতটাই বিস্মিত করেছিল যে, তিনি মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলেন, কিংবদন্তি তিনি। সবার সামনে শিশুর মতো এভাবে যে তাঁর কাঁদতে নেই! তবে কখনও কখনও কোনো কান্নাই বোধ হয় কমলমুকুলদল হয়ে ফুটে ওঠে।

এই যেমন গতকাল প্রতিপক্ষের যুদ্ধংদেহী আক্রমণে বিশ্রীভাবে আহত হয়ে মেসি বসে যাওয়ার পর তাঁর চোখের জল মুছিয়ে দিয়েছিলেন লাওতারো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ১১২ মিনিটে তাঁরই গোলে লাতিনের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট অটুট রেখেছে আর্জেন্টিনা। গত তিন বছরে তিনটি বৈশ্বিক শিরোপা জয় (২০২১ সালের কোপা, ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ও ২০২৪ সালে কোপা)– পড়ন্ত বেলায় পুণ্যস্নান করে যেন দেবদূত হয়েই পুরস্কার মঞ্চে ফিরে এসেছিলেন মেসি। সঙ্গী করেছিলেন অবসরে যাওয়া তাঁরই বন্ধু ডি মারিয়া ও সতীর্থ ওটামেন্ডিকে। আসলে তাদেরই তো বিদায়ী অর্ঘ্য দিতে চেয়েছিলেন মেসি নিজে কিছু একটা করে। হয়নি বলেই হয়তো মুখ ঢেকে অসহায়ত্ব ঢাকতে চেয়েছিলেন!

সবার চেয়ে বেশি ১৬ বার কোপা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা (উরুগুয়ে ১৫ বার), ক্যারিয়ারের সব মিলিয়ে সবার চেয়ে বেশি ৪৫ ট্রফি স্পর্শ করেছেন মেসি (দানি আলভেজ ৪৫টি)– এসবই তো তাঁর ‘রোদনভরা বসন্ত’। মেসি মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার সময় আর্মব্যান্ড পরিয়ে যান ডি মারিয়াকে। তিনি উঠে যাওয়ার সময় সেটাই ওটামেন্ডিকে পরিয়ে দিয়ে যান। তখন তাঁর চোখে জল, অনেক রঙের ছবি আঁকা ছিল সেই জলে। আসলে এদিন কলম্বিয়ার মাত্রাতিরিক্ত শরীরী ফুটবলে ম্যাচের শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিল আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠে বল দখলের লড়াইয়েও পুরো ম্যাচে পিছিয়ে ছিল আলবিসেলেস্তেরা (৪৪ শতাংশ)। গোলমুখে যেখানে কলম্বিয়া মোট ১৯টি শট নেয়, সেখানে আর্জেন্টিনা মাত্র ১২। তুলনায় খর্বকায় আর্জেন্টাইনরা কলম্বিয়ার মারমুখো মেজাজের সঙ্গে কিছুতেই যেন পেরে উঠছিলেন না। কলম্বিয়ার খেলোয়াড়রা স্বীকৃত ফাউলই করেন ১৮টি, যেখানে আর্জেন্টিনা ৮টি।

৪-৩-৩ ফরমেশন সাজানো কলম্বিয়ার মাঠে ফরোয়ার্ড কোরডোবাকেও দেখা যায়। একসময় আলভারেজের চোখে চোখ রেখে গার্ড দিতেন। ধারাভাষ্যকাররা বলছিলেন, এটা ছিল আর্জেন্টাইনদের মধ্যে ভীতি ও মনোবল ভেঙে দেওয়ার একটা কৌশল। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে ক্রস করতে গিয়ে মেসি ডান পায়ের গোড়ালিতে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের অ্যারিয়াস আঘাতে আহত হন, তার পরও খেলে গিয়েছিলেন। কিন্তু ৬৬ মিনিটে আবারও সেই ডান পায়ের পাতায় আঘাত পান। তাঁকে উঠিয়ে নিকোলাস গঞ্জালেসকে নামিয়েছিলেন কোচ স্কালোনি। অতিরিক্ত সময়ে অতিরিক্ত অ্যানার্জি আনতে ৯৭ মিনিটে একসঙ্গে তুলে নেওয়া হয় আলভারেজ, ম্যাক অ্যালিস্টার ও এনজো ফার্নান্দেজকে। বদলি হিসেবে নামানো হয় লাওতারো মার্টিনেজ, লিয়ান্দ্রো পারদেস ও জিওভান্নি সেলসোকে। দারুণ কাজে দিয়েছিল তা, মিনিট পাঁচের মধ্যেই অতিরিক্ত সেই ফুটবলার সেলসোর লং পাস থেকেই লাওতারোর নিখুঁত শটে গোল পায় আর্জেন্টিনা। জোড়া কোপার ট্রফি হাতে ইনস্টাগ্রামে নিজের ছবি পোস্ট করে মেসিও লিখেছেন ‘ওয়ান মোর’। ইঙ্গিত স্পষ্ট, জয়যাত্রা চলতে থাকবে ‘লিও জেনারেশনের’।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *