মালিকানা পরিবর্তনের দাবিতে ব্যাংকে ব্যাংকে মানববন্ধন

জাতীয়

সরকার পতনের পর থেকেই মালিকানা বদল ও পদবঞ্চিতদের দাবি আদায়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে ব্যাংকে ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনায় অন্তত ছয় জন গুলিবিদ্ধ হন। সরকার পতনের পর থেকে ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ‘লুটেরাদের’ বের করে  দেওয়ার দাবি জানান।

 

সোমবারও প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে ব্যাংকটির পুরোনো কর্মীরা। ফলে ব্যাংকটিতে ২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। পাশাপাশি তাঁরা রবিবারের গুলির ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মহড়া দিয়েছে একদল অস্ত্রধারী লোক। এতে তাঁরা আতঙ্কে সময় পার করছেন কর্মী ও ব্যাংকের গ্রাহকরা। আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও তাঁর ছেলেসহ বেক্সিমকোর সব পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ব্যাংকটির বর্তমান ও চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ইউসিবির বর্তমান পর্ষদের বিরুদ্ধেও মানববন্ধন করে শেয়ারহোল্ডারদের একটি অংশ। বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, ওয়ান, বাংলাদেশ কমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভ হয়। সুযোগ-সুবিধা ও দাবিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকেও বিক্ষোভ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের মতো একটি স্পর্ষকাতর প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন-গোলাগুলি কোনভাবেই কাম্য নয়। যৌক্তিক দাবি-দাওয়া ব্যাংকের প্রচলিত নিয়ম মেনে দ্রুত সমাধান করা উচিত। না হলে আমানতকারীরা ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারালে সংকট আরো দীর্ঘায়িত হবে।

বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘ব্যাংকে বিক্ষোভ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক বছরে কোনো কোন ব্যাংকের একটি পক্ষ অন্য সব ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের কোনঠাসা করে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলো। সেটার কারণে অনেক অনিয়মও হয়েছে। এ ধরণের ঘটনা যেখানে হয়েছে সেসব জায়গায় বিক্ষোভ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে বিক্ষোভ ব্যাংকের দরজায় না করে আলোচনার টেবিলে হওয়া উচিত। সেটা হতে হবে একটা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। কর্মীদের অভিযোগ জানানোর একটা সঠিক প্ল্যাটফর্ম দিতে হবে। যারা বিক্ষোভ করছে, ক্ষোভ প্রকাশ করছে তাদের হয়তো ইস্যুগুলো যৌক্তিক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নেতৃত্বেও এই আলোচনাগুলো শুরু করে ব্যবস্থাপনা ও পর্ষদে পরিবর্তন আসা দরকার।’

মাশরুর রিয়াজ বলেন, গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও কারও কারও শঙ্কা বাড়ছে অহেতুকভাবে। সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে এবং সেটা দ্রুত করতে হবে। ঢালাওভাবে ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর পরিমাণ দুই লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। এতে ট্রানজাকশনের ক্ষতি হবে। ধীরে ধীরে এটাকেও বাড়িয়ে একটু যৌক্তিক জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকে এসব বিশৃঙ্খলা যদি এভাবে খোলা ময়দানে চলে, তাহলে বিদেশি স্টেক হোল্ডারদের মধ্যেও আস্থার সংকট দেখা দিতে পারে।

গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করছেন, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন ব্যাংকে মালিকানা নিয়ে বিক্ষোভ, আন্দোলন, নিয়ন্ত্রণ নেওয়াসহ যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে সেখানে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এই মুহূর্তে ব্যাংক থেকে যাতে কেউ টাকা নিয়ে চলে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পুরো ব্যাংক খাত একসঙ্গে সংস্কার করা যাবে না। কিছু কাজ করতে সময় লাগবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশাসনিক কাঠামো দ্রুত পুনর্গঠন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *