ভুলের ফল পেয়েছি, আমি ক্ষমাপ্রার্থী : মাশরাফি

জাতীয়

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব ছেড়ে গোপনে দেশ ত্যাগ করেছেন তিনি। ফলে অবসান ঘটেছে টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের। এর পর দলটির বেশির ভাগ শীর্ষ নেতারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তবে দেশেই আছেন নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করায় সমালোচনা শুনতে হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়কের কড়া সমালোচনা এখনো চলছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তাই নড়াইল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়ি পুড়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

এত কিছু হওয়ার পরেও এত দিন মুখ খোলেননি মাশরাফি। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস। দেশের ক্রান্তিকালে মানুষের পাশে থাকতে না পারায় দায় মাথা পেতে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক।

একটি অনলাইন পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফি বলেছেন, ‘এই কষ্ট থাকবেই। হয়তো আজীবন থাকবে। দেশের একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে পাশে থাকতে পারিনি, কিছু করতে পারিনি, এটা আমাকে সব সময়ই ভোগাবে, পোড়াবে। সব সময়ই থেকে যাবে। সব সময় সব কথা বলা যায় না। কিছু জিনিস হয়তো বলার ব্যাপারও নয়। এত দিন চুপ ছিলাম। আজকে কিছু বলছি। কিছু হয়তো সামনে বলব। জীবনে অনেক কিছু হবে। তবে এই কষ্টটা রয়ে যাবে। যত কিছুই হোক, এটা কখনো যাবে না। নিজের ওপর সেই হতাশা সব সময়ই থাকবে।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যৌক্তিক ছিল বলেও স্বীকার করেছন মাশরাফি। সাবেক পেসার বলেছেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক ছিল। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছিল, এটা হয়ে যাবে। তবে সবাই যখন চাচ্ছিল যে আমি কিছু একটা বলি বা স্ট্যাটাস দিই (ফেসবুকে)…ততক্ষণে আসলে সব কিছু এত দ্রুত হচ্ছিল…ভাবছিলাম যে আমি যদি কিছু লিখি বা মন্তব্য করি, সেটার সম্ভাব্য পরিণতি কী হতে পারে…অনেক কিছু ভাবছিলাম আর কী…সব মিলিয়ে কিছু লেখা হয়নি।’

বাড়িতে আগুন লাগানোয় কষ্ট পেলেও কারো প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই বলে জানিয়েছেন মাশরাফি। সঙ্গে এমনটিও জানিয়েছেন তার প্রতি কারো ক্ষোভ থাকলে তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। তিনি বলেছেন, ‘নড়াইলের বাড়িটা করেছিলাম মায়ের জন্য। এখন শেষ। অনেকেই বলেছেন মামলা করতে, ব্যবস্থা নিতে। ছবি-ভিডিও সবই আছে অনেকের কাছে। তবে আমি বলেছি, এসব করব না। আমার বাবাকেও বলে দিয়েছি। এখনকার সরকার বা ভবিষ্যতে নির্বাচন করেও যে সরকার আসুক, কারো কাছেই বিচাই চাইব না। কোনো অভিযোগ নেই। খুলনা-যশোর থেকে বা ঢাকা থেকে গিয়ে কেউ এই বাড়ি ভাঙেনি। নড়াইলের কোনো না কোনো জায়গা থেকে উঠে আসা মানুষই পুড়িয়েছে। নড়াইলের মানুষের বিরুদ্ধে বিচার আমি চাইব না। নিজের ভাগ্য মেনে নিয়েছি। হয়তো কোনো ভুল করেছি, সেটার ফল পেয়েছি। কষ্ট আছে অবশ্যই, তবে রাগ-ক্ষোভ নেই কারো প্রতি। আমার প্রতি এখনো কারও ক্ষোভ থাকলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *