♦ ডিএনএ পরীক্ষার পরই সিদ্ধান্ত, বলছে কলকাতা পুলিশ
♦ লাশ না পেলেও মামলা নিষ্পত্তিতে অসুবিধা নেই : ডিবি
♦ শাহিন-সিয়ামকে ফেরাতে চিঠি ইন্টারপোলে
কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকে মিলল মাংসপি-। গতকাল বিকালের দিকে সেপটিক ট্যাংক ভেঙে ময়লার মধ্যেই কয়েক টুকরা মাংসপি-, কিছু চুল ও মানবদেহের একটি হাড় উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি পুলিশ। তবে সেই মাংসপি-ই ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃতদেহের অংশ কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। কলকাতার সিআইডি বলছে, ডিএনএ পরীক্ষার পরই এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে। অন্যদিকে, এমপি আনার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন ও তার সহযোগী সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি)। যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালের এনসিবির কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ সদর দফতরের এনসিবি শাখা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমপি আনারের লাশ কিংবা এর খন্ডিতাংশ খুঁজতে খাল থেকে সেপটিক ট্যাংক, কোনো কিছুই বাদ রাখছে না পুলিশ। বর্তমানে ভারতের কলকাতায় অবস্থানরত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ ও ভারতে গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যে রীতিমতো চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য স্থানগুলো। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির এডিজি অখিলেশ চতুর্বেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ফোনে সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সেটি মানুষের মাংস কি না বা এমপি আনারের লাশের টুকরা কি না তা এখনো বলার সময় আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। জানা গেছে, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বিকালের দিকে সঞ্জীভা গার্ডেনসের বিইউ-৫৬ ব্লকের পেছনে যে সেপটিক ট্যাংক আছে, তাতে লাশের টুকরার সন্ধানে অভিযান চালান কলকাতা সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা। লোক নামিয়ে সেই সেপটিক ট্যাংক থেকে ময়লা বাইরে বের করা হয়। আর সেই ময়লার ভিতর থেকে সাদা রঙের প্রায় কয়েক কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, এটি খুন হয়ে যাওয়া এমপি আনারের লাশ হলেও হতে পারে।
সিদ্ধেশ্বর মন্ডল নামে সঞ্জীভা আবাসনের তিন নম্বর গেটের উল্টোদিকে থাকদারি গ্রামের বাসিন্দা নিজের চোখে সেপটিক ট্যাংক থেকে সেই লাশের টুকরা উদ্ধার করতে দেখেন। তার দাবি- ওই সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা খুলে প্রায় ৩ থেকে ৪ কেজি মাংসের কিমা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা দেখে ছবিও তুলতে যান তিনি। যদিও তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে সেই ছবি তুলতে বাধা দেন।
সিদ্ধেশ্বর জানান, এদিন বিকালে তার ভগ্নিপতি ভূষণ শিকারি ওই সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কারের দায়িত্বে ছিলেন। সেই খবর পেয়েই তিনি ট্যাংকের কাছে যান। মাংস উদ্ধারের পর সেই ছবিও মোবাইলে ধারণ করতে যান তিনি। আর তখনই সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে ভিডিও করতে নিষেধ করেন। তার দাবি এই লাশের টুকরা এমপি আনারের। জানা গেছে, কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া আসামিরা গ্রেফতারের পর হত্যার বর্ণনা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করে বিভিন্ন তথ্য দিলেও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্র ও যে লাগেজে মৃতদেহ গুম করা হয়েছে সেটিরও কোনো খোঁজ মেলেনি। গতকাল তৃতীয় দিনের মতো কলকাতার কৃষ্ণমাটি ভাঙর এলাকার বাগজোলা খালে এমপি আনারের মৃতদেহ উদ্ধার অভিযান পরিদর্শন করেছে ঢাকার ডিবি পুলিশের প্রতিনিধি দল। তবে মৃতদেহ বা মৃতদেহের অংশ উদ্ধার না হলেও এ মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, কলকাতার সিআইডি কর্মকর্তারা প্রত্যেকটি বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছেন। বাংলাদেশ থেকে পাওয়া তথ্য এখানকার আসামির সঙ্গে কথা বলে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এখানকার আসামিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে আমরা প্রাপ্ত তথ্যের হুবহু মিল পেয়েছি। তাছাড়া একজন জীবন্ত মানুষ (এমপি আনার) সঞ্জীভা গার্ডেনসে ঢুকছেন, সেই নারী ঢুকলেন, তার ডিজিটাল এভিডেন্স রয়েছে। কিন্তু এমপি ওই আবাসন থেকে বেরোলেন না, তারও প্রমাণ রয়েছে। আবার সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তিকে বের হতে দেখা গেছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমার মনে হয় ভারত এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা, ডিজিটাল এভিডেন্স, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, পিসিপিআর (প্রিভিয়াস কনভিকশন অ্যান্ড প্রিভিয়াস রেকর্ড)- এ বিষয়গুলো আমলে আনবেন। সেক্ষেত্রে এ হত্যাকান্ডের বিচার করা কষ্টকর হবে বলে আমি মনে করি না।
শাহিন-সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোলে চিঠি : এমপি আনার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন ও তার সহযোগী সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি)। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহিন। আর তার সহযোগী সিয়াম পালিয়ে গেছেন নেপালে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি, এনসিবি) আলী হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আনোয়ারুল আজিম হত্যার আসামিদের গ্রেফতারে সহযোগিতার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।