মোঃ ওয়াজেদ আলী, বিশেষ সংবাদদাতাঃ
শিক্ষকতা একটি মহান ও সম্মানজক পেশা। এই সম্মানের জায়গাটি বিতর্কিত হওয়া আদৌ কাম্য নয়। একজন শিক্ষক হবেন সমাজের দর্পণ, যেখান থেকে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, গোটা জাতি শিক্ষা নেবে। আমাদের সমাজ, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের সব আচরণকে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় মনে করে। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয় আপাদমস্তক আদর্শবান।
শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষকের লালসার শিকার হয়ে শিক্ষকের দ্বারা ছাএ হলো বলাৎকার। বলাৎকারকে কেন্দ্র করে শিশু-কিশোর ছাত্রকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বর্বরতার ফাঁদে এখনো আটকে আছে অসংখ্য ছাত্রী। ধর্ষক শিক্ষকদের লালসায় বহু শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, চুরমার হয়ে যাচ্ছে সব স্বপ্ন। অনেকেই আত্মহননের মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে অনেক ক্ষেত্রে আত্মহত্যার মধ্য দিয়েই নিজের সব গ্লানির চিরসমাপ্তি ঘটায় ভুক্তভোগীরা।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পার্শ্ববর্তী সাদুল্যাপুর উপজেলার “খোর্দ্দ কোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের” প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ছাত্রকে বলৎকারের / অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত ০৩ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে “খোর্দ্দ কোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অএ বিদ্যালয়ের এক ছাএীর মা বাদী হয়ে “খোর্দ্দ কোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পার্শ্ববর্তী সাদুল্লাপুর এর ঐতিহ্যবাহী খোর্দ্দকোমরপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কর্তৃক ছাত্রের সাথে অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ উঠেছে যে, অত্র প্রতিষ্ঠানের “প্রধান শিক্ষক” জনাব মোঃ শহিদুল ইসলাম খোর্দ্দকোমরপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় সাদুল্যাপুর, গাইবান্ধা তিনি ঐতিহ্যবাহী এবং সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও দীর্ঘদিন ধরে অত্র প্রতিষ্ঠানের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত অনৈতিক কার্যকলাপ করিয়া আসিতেছে। এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি উক্ত প্রতিষ্ঠানের “প্রধান শিক্ষক” বিদায়ী একজন শিক্ষার্থীকে বলাৎকার করেন। যাহার প্রমাণ স্বরূপ দুখন্ড ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে। বিভিন্নভাবে এলাকার সচেতন মহলের কাছে ভিডিও প্রকাশ পাওয়ায় এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং অভিভাবকদের প্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে অভিযোগ দায়ের করেন।
খোর্দ্দ কোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, সুনাম ধন্য প্রতিষ্ঠানটি ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন সাবেক পূর্ব বাংলার মূখ্য মন্ত্রী আবু হোসেন সরকার, রাঃবি সাবেক ভি. সি মরহুম মকবুলার রহমান, সাদুললাপুর -পলাশবাড়ী আসনের সফল মরহুম এম পি ডাঃ ইউনুস আলী সরকার, রংপুর কারমাইকেল কলেজে এর সাবেক প্রিঃ রফিকুর রহমান চৌঃ, ডি.সি শফিউল ইসলাম, ঐ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সুজন,জাপান নাগোয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পি এইচ ডি করে ঐ ভার্সিটির প্রফেসর হিসাবে কর্মরত, শিল্প অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আমিরুল ইসলাম, গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আর.এম.ও ডাঃ হারুন অর রশিদ এবং খোর্দ্দ কোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বি সি এস ক্যাডার ছাড়াও আরো অনেক কৃতি সন্তান অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রের সাথে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের ফলে সরজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায় যে, এলাকাবাসী ও অভিভাবক মহলের মাঝে চাপা খোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি “টপ অফ দ্যা টাউনে” পরিণত হয়েছে তবে গত ৩ জুলাই কয়েকজন সাংবাদিক বিদ্যালয়ে সরজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে গেলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাওয়া যায়নি এ সময় তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি পরে পুনরায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায় বারবার যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। পরে ১০-০৭-২০২৪ তারিথে সাদুললাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল হোসেন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগের ফলে সরজমিনে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় অত্র স্কুলের শিক্ষক মন্ডলী সহ অত্র এলাকাবাসী সহ গনস্বাক্ষর করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করে অভিযোগ দায়ের করেন।
বিদ্যালয়ের অবিভাবক ও অভিযোগকারী সেলিনা বেগম জানান বিষয়টি জানার পরে অভিযোগ পত্র দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম সহ তাহার ভাড়া গুন্ডারা সেলিনা কে পালটা থ্রেড দেয় এবং অভিযোগ উঠিয়ে নিতে বলে। প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন লোকদের টাকা দিয়ে এঘটনা মিথ্যা প্রমানের চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এমতাবস্থায় অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকের অসামাজিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ছাত্র ধর্ষণ (বলাৎকার) করায় তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দাবি জানান। অন্যান্য শিক্ষক অভিভাবক মহলের সাথে আলাপ করে জানা যায় এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের বহিষ্কার এবং আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন কারণ বিষয়টি নিয়ে সমগ্র এলাকায় তোলপাড় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এক ছাত্রীর অভিভাবক জানান একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে ছাত্রের সাথে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারে তাহলে আমাদের মেয়েরা এই স্কুলে কেমনে নিরাপদ আশা করা যায় এ ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছে।
খোর্দ্দ কোমর পুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়েরর প্রঃ শিঃ শহিদুল ইসলাম এর বলাৎকারের শিকার ঐ স্কুলের বিদায়ী ছাত্র শাওন কে পাওয়া না যাওয়ায় শাওনের বাবা আউয়াল সরকার জানান বিষয়টি লোকের মুখে শোনার পর শাওনকে শাসন করার পর থেকে শাওন বাসায় নেই ,বাসায় আসলে তাহার নিকট থেকে বিস্তারিত জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল হক মিঠু চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছাত্রের সাথে শিক্ষকের বলাৎকারের বিষয়টির কথা শুনেছেন দেখেন নাই তবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম মাসের ২৬ তারিখ থেকে ছুটিতে আছেন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন মিটিং করে এবিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাদুললাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল হোসেন ছাত্রের সাথে শিক্ষকের বলাৎকারের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে