স্টাফ রিপোর্টার:
নোয়াখালী ফেনী এবং লক্ষ্মীপুরের (নোফেল) সাধারণ মানুষের মনমুগ্ধকর পর্যটন স্পট হিসেবে তৈরি হয়েছে ড্রিম ওয়ার্ল্ড ।নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ড নামেই এর পরিচিতি এখন সারাদেশে। পাঁচটি স্তরে এই পর্যটন কেন্দ্রটিকে গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নোফেল গ্রুপ। এই তিনটি জেলার সাধারণ মানুষের অল্প অল্প টাকার শেয়ার এর মাধ্যমে এই পর্যটন স্পটে বিনিয়োগ আসে। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে এই বিনোদন প্রকল্পটিতে। কিন্তু প্রথম স্তরের নির্মাণ কাজ শেষ হবার পর নোফেল গ্রুপের অন্তরদ্বন্দ্ব, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ হস্তক্ষেপ এবং চাঁদাবাজদের ভয়ঙ্কর থাবায় স্থবির হয়ে যায় পর্যটন প্রকল্পটি। ২০২৪ সালের আগস্টে ঝড়ো হাওয়ার মতো দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং ক্ষমতার পালা বদলের পর এই তিন জেলার সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ড্রিম ওয়ার্ল্ড এর মালিকানা বা অধিকার ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। নোয়াখালী ড্রিম ওয়ার্ল্ডের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নোফেল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ এনামুল হক ও সে প্রত্যাশা করেন। দৈনিক বঙ্গ সংবাদ এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারেও তিনি সেই কথা বলেছেন ।
সেই সাক্ষাৎকারের মৌলিক অংশটুকু পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো ।
মিঃ এনামুল হক বলেছেন পেশাগতভাবে আমি ছিলাম একজন ব্যাংকার। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর মাইজদী কোর্ট শাখা ও লাকসাম শাখার সাবেক অপারেশন ম্যানেজার। ২০১২ সালের জুলাই মাসে আমি সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ডিউ অবস্থায় চাকরি থেকে রিজাইন করে আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের প্রজেক্ট ড্রিম ওয়ার্ল্ড বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করি । ছাত্র জীবনে ১৯৯১ সালে নোয়াখালী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সময় থেকে আমি একটি স্বপ্ন লালন করি, সেটা হলো নোয়াখালীকে বদলে দেয়া!কারণ নোয়াখালী নিয়ে কত গান, কত কবিতা, কত প্রবাদ ও স্লোক রয়েছে ; কিন্তু বেশিরভাগ লোকই নোয়াখালী বেড়াতে গিয়ে বলেন, নোয়াখালীতে দেখার মত কিছু নেই, আবার শহরটাও অত্যন্ত ছোট। আমি ১৯৯৫ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে দর্শন সাবজেক্ট এ মাস্টার্স করি এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ সম্পন্ন করি। ২০১০ সালে যখন আমি নোফেল গ্রুপের চেয়ারম্যান হই তখন আমি স্বপ্নটাকে বাস্তবায়নের চেষ্টা শুরু করি। প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত আমি চিন্তা, গবেষণা, ভৌগলিক অবস্থা, নোয়াখালীর অবস্থান নিয়ে ভাবতে থাকি এবং সারা দেশের প্রায় সবগুলো বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে দেখি। এরপর দেশের বাইরে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইন্ডিয়া, সৌদি আরব সহ যেখানেই যাই নোয়াখালীকে বদলে দেয়ার মত একটা পরীশীলিত ও মার্জিত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই। বারংবার নোফেল গ্রুপের বোর্ডে প্রস্তাব উত্থাপন করি এবং ২০১৩ সালে বোর্ড এ বিষয়ে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে আমাকে অনুমোদন করে এবং এরই আলোকে আমরা কাজ শুরু করি।
প্রশ্ন: কিভাবে আপনি ড্রিম ওয়ার্ল্ডের প্রকল্পের কাজ শুরু করেন এবং শুরুতে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা?
এনামুল হক বলেন নোয়াখালী সদর ৪ আসনের সাবেক এমপি শাহজাহানের নোয়াখালী হোয়াইট গোল্ড নামক একটা প্রকল্প আমরা নোফেল গ্রুপের পক্ষ থেকে ক্রয় করি এবং নোফেল ড্রিম ওয়ার্ল্ড নামক প্রকল্পের কাজ শুরু করি বৃহত্তর নোয়াখালী বাসী এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসে। তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এর এমপি একরামুল করিম চৌধুরী কে উপেক্ষা করে এলাকায় কেউ একটা দোকানও উদ্বোধন করতে পারত না, তাকে অগ্রিম চাঁদা দিয়ে মেহমান করা লাগতো। আমি পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এমপি একরামুল করিম চৌধুরীকে দিয়ে ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন এবং বাস্তবে কাজ শুরু করি। ৫ টা স্তরে ৫ বছরে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। প্রথম অংশ এক বছর এর মধ্যে শেষ করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য এই একরামুল করিম চৌধুরীকে প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন,এই মুহূর্তে আমি দলীয় কাজে ব্যস্ত আছি, আমি সময় সুযোগ করে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে দেবো আপনারা অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দিন। তার পরামর্শ ক্রমে আমরা অনানুষ্ঠানিক উদ্বোধন করি এবং মাত্র চার মাস শেষ হওয়ার আগে সদর থানার ওসিকে দিয়ে ফোন করে আমাদেরকে জোরপূর্বক প্রকল্পটি চলতি অবস্থায় বন্ধ করে দেন। এরপর আমরা দফায় দফায় যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধ করা আছে, চালু করা যাবে না।
প্রশ্ন :এটাতো রাজনৈতিক বাধার কথা বললেন, এছাড়া চাঁদাবাজি এবং নোফলের অন্তর দ্বন্ধ কতটুকু ছিল?
মি: এনামুল হক বলেন একদিকে রানিং প্রকল্প বন্ধ করে দেয়, অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আবার বিভিন্ন ভাবে আমাদের ডিরেক্টর গণের মধ্যে বিভেধ সৃষ্টি করে দেয়। কোম্পানির চেয়ারম্যান কে দুই দুই বার কিডন্যাপ করে এবং সন্তানদেরকে কিডন্যাপের হুমকি দিতে থাকে ; কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরকেও দলীয় সন্ত্রাসী পাঠিয়ে অফিসে হত্যা করার হুমকি দেয়। এসমস্ত অবস্থায় আমরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি। এমতাবস্থায় কোম্পানির ডিএমডি জহিরুল আলম সাহেব এমডি ও চেয়ারম্যান কে কোম্পানি থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং বলেন, আপনারা দুইজন এ অবস্থায় সরে গিয়ে দূরে অবস্থান করেন ; আমি অন্যদেরকে নিয়ে চালিয়ে নেব এবং আপনাদের লাইবেলিটি ও ব্যাংক লাইবিলিটি আমার দায়িত্বে সমাধান করব। এই আলোকে দুটি বোর্ড মিটিং হয় এবং রেজুলেশন হয়; একটি ঢাকার অফিসে আরেকটি নোয়াখালীর নাইস গেস্ট হাউসে। ডিএমডি জনাব জহিরুল আলম এর এমন প্রস্তাবে আমরা রাজি হই এবং গ্রুপের একটা কোম্পানি থেকে আমরা দুজন চলে যাওয়ার ব্যাপারে একমত হয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করি। ডিএমডি জনাব জহিরুল আলম তখন নোয়াখালীর কোর্টে উকিল হিসেবে কাজ করা শুরু করছেন; আমরা রেজুলেশন মোতাবেক চলে আসলে ডি এম,ডি জহির সাহেব নোয়াখালী শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি পিন্টু মিয়াকে কৌশলে হাতে নেন এবং কোম্পানির বিভিন্ন জমি ও প্লট রেজিস্ট্রির কাজ চালিয়ে যান এম ডি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে। সাব রেজিস্টার এম ডি ও চেয়ারম্যান দুইজনেরই অনুপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করতে রাজি না হলে পিন্টু মিয়া কে দিয়ে চাপ না হলে কিন্তু মেয়েকে দিয়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সাব রেজিস্টার থেকে রেজিস্ট্রি কাজ চালিয়ে যান। মানুষের বিনিয়োগের টাকার পরিবর্তে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা বলে একবার কৌশলে ম্যানেজিং ডিরেক্টর কে নিয়ে যান এবং ওনার(ডিএমডি) কোরামের কয়েকজনের নামে প্রায় ৩০ একর ভূমির পাওয়ার অব এটর্ণি নিয়ে নেন! অন্যদিকে বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন রকম ভুল বোঝানোর চেষ্টা করে এবং কোম্পানির কোরাম সংখ্যক লোককে নিজের পক্ষে বশীভূত করে নেয়। বলা বাহুল্য বর্তমানে ছাত্র-গন আন্দোলনের সফল বিপ্লবের পর তিনি বিগত দিনের বশীভূত করা কয়েকজন লোককে দিয়ে ড্রিম ওয়ার্ল্ড যেটা দেড় হাজার লোকের অংশগ্রহণ করা টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল তাদেরকে উপেক্ষা করেএবং অনেক বিনিয়োগকারির টাকা ফেরত বা জমি রেজিস্ট্রি না দিয়ে ৫/৬ জন প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে এবং দখলের চেষ্টা শুরু করেছে।
প্রশ্ন :রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এই প্রকল্প নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী। আপনি এখন কি করতে চান এবং আপনার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মি: এনামুল হক বলেন আমি চাই প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে শুরু হয়েছিল সবাই সম্মিলিত অংশগ্রহণে নোয়াখালী বাসীর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করাতে এবং আমরা প্রত্যেকের দায়িত্ব পালন করে যেতে। এমতাবস্থায় তিনি তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি দখলে নেমে পড়েছেন। এ ব্যাপারে আপনাদের পক্ষ থেকে এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হস্তক্ষে কামনা করছি এবং নোয়াখালী বাসীর প্রতিষ্ঠান নোয়াখালী বাসির জন্য তৈরি করতে সহযোগিতা চাচ্ছি।উল্লেখ্য এই জহিরুল আলম সাহেব বর্তমানে যিনি নোয়াখালী জজকোর্টে উকিল হিসেবে প্র্যাকটিস করেন তিনি নোয়াখালী শহরে নোয়াখালীর রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, মিফতাহুল ফালাহ ফাউন্ডেশন এবং এর প্রকল্প নোয়াখালী ক্যাডেট মাদ্রাসা, এগুলো প্রতিষ্ঠা করেন যাদেরকে সামনে রাখলে সহজে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব তাদেরকে সামনে এনে এবং হাইলাইট করে; পরবর্তীতে যারা শেখ হাসিনার মতো ওনার কোরামে মধ্যে থাকেন তাদেরকে রেখে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের ছলে বলে কৌশলে বের করে দেন এভাবে সবগুলো প্রতিষ্ঠান উনি ওনার দখলে নেন। হাতিয়া থেকে উনি যখন আসেন (২০০৯-১০সালে) তখন তিনি ২/৩ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেয়ার কোন সামর্থ নেই। অথচ ৪-৫ বছরের মধ্যে তার নোয়াখালী শহরে রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট, রয়েছে বিভিন্ন প্লট, রয়েছে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং হাতিয়াতে বিপুল পরিমাণ জমি এবং কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বড় আকারে শেয়ারের মালিক এমতাবস্থায় বিনিয়োগ কারিগনের লাইবেলিটি গুলো এবং ব্যাংক লাইবিলিটি উনি সমন্বয় করলে আমাদের কোন আপত্তি নাই, আর না হয় যেভাবে শুরু করা হয়েছিল সবাই সম্মিলিতভাবে আগের মত কাজ করে ডিম ওয়ার্ল্ডের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে নোয়াখালী বাসীকে গর্বিত করতে চাই।