নেতানিয়াহুর চাপ বাড়ানোর ঘোষণার সাথে সাথে গাজায় ভয়াবহ হামলা

আন্তর্জাতিক

গাজা উপত্যকা, ফিলিস্তিনি অঞ্চল, ১৮ জুলাই, ২০২৪ (বস ডেস্ক): প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের উপর চাপ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার মার্কিন-ঘোষিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার আশা ম্লান হয়ে যাওয়ার পর ইসরায়েল বুধবার গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তির জন্য আলোচনাকে দুর্বল করছে। কারণ, তারা যুদ্ধ শেষ করতে চায় না।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, ‘সামরিক কাঠামো, যোদ্ধাদের অবকাঠামো, তাদের ইউনিটের অবস্থান এবং অস্থায়ী কাঠামো’ লক্ষ্য করে তারা ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২৫টি হামলা চালিয়েছে। বারবার হামাসকে নির্মূল করার ঘোষণা দেয়া নেতানিয়াহু মঙ্গলবার জোর দিয়ে বলেছেন, ক্রমবর্ধমান চাপ সত্ত্বেও হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অভিযানে কোনো পিছু হটবে না। তিনি বলেন, ‘জীবিত সব জিম্মি এবং মৃতদের দেশে ফিরিয়ে আনার এবং যুদ্ধের সমস্ত লক্ষ্য অর্জনে জন্য চাপ আরও বাড়ানোর এটাই ঠিক সময়।’
তিনি পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় এই লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমরা তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে আছি।’
হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫২ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ভূখন্ডের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানিয়েছে, মধ্য গাজার নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে তিনটি হামলায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে,অন্যটি একটি বাড়িতে এবং তৃতীয়টি একটি মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে।
ভূখন্ডের সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি পরে বুধবার মধ্য ও উত্তর গাজা জুড়ে ইসরায়েলি অভিযানে ১৫ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে খান ইউনিসের কাছে তিন শিশু এবং একজন মহিলা নিহত হয়েছেন।
নাসের হাসপাতালের একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজায় রাফাহ শহরের উত্তর-পশ্চিমে শাকুশ এলাকায় ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে দুজন নিহত হয়েছে।
গাজার অন্তত ৯০ শতাংশ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তাদের অনেকেই জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় চাইছে। এর মধ্যে সাতটি স্কুল ৬ জুলাই থেকে ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) মঙ্গলবার জানিয়েছে, নয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজা জুড়ে জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার শিকার হওয়া নুসিরাতের জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে পরিবারের সাথে আশ্রয় নেয়া উম্মে মোহাম্মদ আল-হাসানাত বলেন, ‘কেন তারা আমাদের টার্গেট করে আমরা তো নিরীহ মানুষ!’ তিনি বলেন,‘আমরা অস্ত্র বহন করি না,শুধু বসে থাকি এবং নিজেদের এবং আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা খোঁজার চেষ্টা করি।’
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ মে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি রোডম্যাপ প্রকাশ করার পর থেকে ওয়াশিংটন ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছে।
মিশরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ইসরালেয়ল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মঙ্গলবার গভীর রাতে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে টেলিফোনে হামাস নেতা অচলাবস্থার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেন।
রোববার হামাসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর দলটি বর্তমান আলোচনা থেকে সরে আসছে কিন্তু যদি তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয় তবে তারা ফিরে আসতে প্রস্তুত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরায়েলের নির্বিচার, নৃশংস হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৮,৭৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
যুদ্ধ উপকূলীয় অঞ্চলকে ধ্বংস করেছে এবং গাজাবাসীকে খাদ্য, ওষুধ এবং মৌলিক পণ্যের সংকটে ফেলেছে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে, গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি রিক পিপারকর্ন বলেছেন, গত মাসে শুধুমাত্র ১৬টি সাহায্য ট্রাক কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করেছে। তখন সেখানে আরো কয়েক ডজন ট্রাক ছিল। এখনও সে গুলো অপেক্ষমান রয়েছে।
সাহায্যের জন্য গাজা ও মিশরের সাথে সংযুক্ত প্রধান ক্রসিং পয়েন্ট রাফাহ ইসরায়েল কয়েক মাস ধরে বন্ধ করে রেখেছে।
ডাব্লিউএইচও আরও বলেছে,অঞ্চলটির ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৫টি আংশিকভাবে কাজ করছে এবং অক্টোবর থেকে গাজায় স্বাস্থ্য সুবিধার বিরুদ্ধে এক হাজারেরও বেশি হামলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *