দেশের বাইরে পাচার হওয়া ৯০ হাজার কোটি টাকার খোঁজে দুদক

জাতীয়

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ২৯ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দেশের বাইরে পাচার করা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার খোঁজে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে আটজন মন্ত্রী, ছয়জন প্রতিমন্ত্রী এবং ১৫ জন এমপি রয়েছেন। তারা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। এ ছাড়া খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান বাবু, হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, এমপি অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিল, এমপি জান্নাত আরা হেনরী, শাহ আলম তালুকদার, ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু, ডা. মনসুর রহমান, মো. আবুল কালাম আজাদ, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন), সাইফুজ্জামান শিখর, তানভীর ইমাম, শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী। জানতে চাইলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন এ প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। কোন কোন দেশে কার কী পরিমাণ সম্পদ পাচার হয়েছে সেগুলোর খোঁজে আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে। দুদক সূত্র জানায়, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রযুক্তি খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি, এটুআই প্রকল্প, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, হাইটেক পার্ক, আইটি পার্ক তৈরির নামে লোপাট করেছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা। হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কণিকাও। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আমেরিকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নিজের অবৈধ আয়ের অর্থ বৈধ করতে স্ত্রীকে বানিয়েছেন উদ্যোক্তা। তার স্ত্রীর নামে সিংড়ায় রয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ বিঘা জমি। ঢাকায় আছে কমপক্ষে ১৫টি ফ্ল্যাট। নামে-বেনামে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে পলক ও তার স্ত্রীর কণিকার নামে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডনে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে তার কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। সূত্র জানায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের দুবাইতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খানকে ২০১৪ সালে তলব করে দুদক। অসীম কুমার উকিল ও তার স্ত্রী অপু উকিলের বিরুদ্ধেও রয়েছে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। অবৈধ অর্থে ঢাকার উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ১৫ নম্বরে দুই ইউনিটের সাততলা বাড়ির ১৪টি ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে অর্থ উপার্জন করছেন। ঢাকার ধানমন্ডি ১১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাড়িতে তিনটি ফ্ল্যাট, নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌরসভায় সাউদপাড়ায় রাজকীয় ব্যয়বহুল বাড়ি করেছেন। এ ছাড়া নেত্রকোনা সদরের কাটলী মৌজায় মূল্যবান জায়গা, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় বাড়ি। দেশের বাইরে আমেরিকা ও কানাডায় এই দম্পত্তির দুই ছেলে সায়ক ও শুদ্ধের বাড়ি রয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের স্ত্রীর নামে ২০ একর জমি, দিনাজপুর শহরে একটি বাড়ি, নিজ এলাকায় বহুতল ভবন, খামার বাড়ি, স্ত্রী-কন্যা-ভাইয়ের জন্য আলাদা আলাদা গাড়ি, দিনাজপুর রোডে শিবনগর ইউনিয়নের ফকিরপাড়ায় প্রায় ২৪ একর জমির ওপর একটি খামার বাড়ি থাকারও তথ্য রয়েছে। সাবেক এমপি হেনরীর বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। শুধু ২০২০-২১ অর্থবছরেই তিনি কালো টাকা সাদা করেছেন প্রায় ৩২ কোটি টাকা। নিজ জেলা সিরাজগঞ্জ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পটুয়াখালী ও ঢাকায় তার অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সিরাজগঞ্জে গড়ে তুলেছেন ‘হেনরী ভুবন’। সাবেক রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমের জাপানে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের দুই দিন আগে তিনি জাপান চলে যান। দুদকের অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সাবেক হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ-২ সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য রয়েছে। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে তার ডুপ্লেক্স বাড়ি, বাণিজ্যিক প্লট এবং কোম্পানি আছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বরগুনা-১ আসনের সাবেক এমপি ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভু ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টিআর, কাবিখা এবং কাবিটার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে ৫০০ কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল-২ আসনের সাবেক এমপি শাহে আলম তালুকদারের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে টিআর, কাবিখা এবং কাবিটার সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে অবৈধ টাকায় ব্যাংক গড়ে তোলাসহ নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে, পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে গাইবান্ধা-৪ আসনের সাবেক এমপি মো. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর হাজার কোটি টাকার ব্যবসা- বাণিজ্যের তথ্য পেয়েছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কোম্পানি খুলে ওই কোম্পানির মাধ্যমে নসরুল হামিদ বিপু হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। ওই কোম্পানি প্রতিষ্ঠাকালে বিপু তার নিজের যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বাসভবনের ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। পাওয়ারকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি হিসেবে সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশে নিবন্ধিত। এই কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ নসরুল হামিদ বিপুর আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনদের হাতে। ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমানের পাঁচ দেশে একাধিক বাড়ির খোঁজ পেয়েছে দুদক। দুদক সূত্র বলছে, আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজ নামে ফরিদপুরের মধুপুরে ভবন নির্মাণ, রাজউকসহ (পূর্বাচল) বিভিন্ন জায়গায় জমি ক্রয়; নিজ নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংক পিএলসি, দি সিটি ব্যাংক পিএলসি এবং সোনালী ব্যাংক পিএলসিতে সঞ্চয়পত্র কেনার অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রী মির্জা নাহিদা হোসেনের নামে পরীবাগের শান্তা দিগন্ত টাওয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে ৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বাইরে টাকা পাচার করে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন এবং কানাডায় একাধিক বাড়ি কেনার গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাবেক এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার আয় ও সম্পদের পরিমাণ ছিল বেশ কম। সে সময় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ২২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৬ টাকা। ১৫ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ২০ গুণ। বর্তমানে নগদ টাকাসহ চার কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৯৬৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজ নামে চুয়াডাঙ্গা সদরে তিন তলা বিশিষ্ট বিলাসবহুল জোয়াদ্দার কুটির নামীয় বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতির অর্থে প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি এসি অথবা ননএসি বাসসহ ১৫-২০ টি ট্রাক; তার স্ত্রী ও নিজ নামে সঞ্চয়পত্র; ১টি প্রাডো গাড়িসহ তার দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক। মাগুরা-১ আসনের সাবেক এমপি মো. সাইফুজ্জামান শেখরের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার, বেআইনি কার্যকলাপের মাধ্যমে নিজ নামে মাগুরা জেলার জাগলা নামীয় স্থানে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে অটোব্রিকস ফিল্ডের ব্যবসা, মাগুরা জেলার চাওলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত নগর পদ্মবিলে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে মৎস্য খামার; তার নিজ নামে ১০টি ট্রাক কেনারও তথ্য পেয়েছে দুদক। আত্মীয়স্বজনের নামে গাড়ি, মাগুরায় একাধিক বাণিজ্যিক ভবন, বিভিন্ন জায়গায় অনেক জমি এবং নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে শিখরের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, তার শ্যালকের নামে দুটি এবং খালকুড়া নবাবের ছেলের নামে দুটি গাড়ি কিনেছেন। মাগুরা সদরে তার মনোয়ারা কমপ্লেক্স নামে বহুতল মার্কেট রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন শ ম রেজাউল করিম। ২০১৮ সালেও একই আসন থেকে নির্বাচিত হন তিনি। তিনি প্রথমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী, পরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। পিরোজপুরের নাজিরপুর ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সময় প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন নামে প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং প্রশিক্ষণের নামে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া তিনি দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শ ম রেজাউল করিম দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজ নামে এবং তার পোষ্য এবং আত্মীয়স্বজনের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অনুমোদন করে দুদক। অন্যদিকে মন্নুজান সুফিয়ান ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা-৩ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের টিকিট পাননি। অভিযোগ আছে, মন্নুজান তার এপিএস ছোটভাই মো. সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়, বোনের ছেলে ইয়াছির আরাফাত পৃথিবী ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। আর নিজ নামে ঢাকার উত্তরা-১০ নম্বর সেক্টরে রাজউকের ৫ কাঠা জমি, সাহেববাড়ি রোড, মহেশ্বর পাশা, দৌলতপুর, খুলনায় তিন তলা বাড়ি, দুটি গাড়ি, কেডিএ, মৌথুরী হাউজিংয়ে ১৬ দশমিক ৭ কাঠা জমি কিনেছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির মাধ্যমে তার এপিএস ছোটভাই সাহাবুদ্দিন, সাহাবুদ্দিনের মেয়ে শামীমা সুলতানা হৃদয়, বোনের ছেলে ইয়াছির আরাফাত পৃথিবী কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া কানাডায় বিলাসবহুল বাড়ি গড়েছেন নাটোর-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল ও তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতি। তাদের অর্থ পাচার ও হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এমপি হওয়ার পর তার সম্পদ বেড়েছে ২৮৪ শতাংশ। কানাডার ব্যাংকে তিনটি ব্যাংক হিসাব খুলে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজের নামে দুটি এবং কানাডার একজন নাগরিকের নামে হিসাব খুলে শত কোটি টাকা বিভিন্ন সময় পাচার করেছেন। এদিকে ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঢাকা, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় নামে-বেনামে জমি, বাণিজ্যিক ভবন কেনা, বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ আছে। এ ছাড়া তার মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সি স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

হবিগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তার নিজ নামে, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। তার আত্মীয়স্বজনের নামে সিন্ডিকেট তৈরি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। দেশে-বিদেশে তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ভুয়া রোগী সাজিয়ে সরকারি অনুদানের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, করোনাকোলে প্রশিক্ষণ না করিয়ে বিল উত্তোলন, কাজ না করেই টিআর, কাবিখার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও মায়ের নামে ‘করিমপুর নূরজাহান-সামসুন্নাহার মা ও শিশু বিশেষায়িত হাসপাতাল’ নির্মাণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তার নিজ নামে, স্ত্রী ও পরিবারের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য দুদকের গোয়েন্দা অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। খুলনা-৬ আসনের সাবেক এমপি মো. আকতারুজ্জামান বাবু ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যক্রমসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন। একজন এমপি হয়েও স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে নিজ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জামান এন্টারপ্রাইজের নামে কাজ করে দেশের আইন লঙ্ঘন করেছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়সহ স্ত্রী ও সন্তানদের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদের অর্জন করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *