হাফিজুর রহমান ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই দেশে তৈরী হয় অরাজক পরিস্থিতি। এই অস্থিরতা তৈরিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকতি, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাও ঘটছে। মাঠে প্রশাসন না থাকায় বিভিন্ন স্থানে হামলা, ডাকাতি, লুটপাট করার খবর পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, পূর্ব বিরোধের জের ধরে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে গোষ্ঠীগুলো। এর ফলে এলাকায় বিরাজ করছে অস্থিরতা। এমন পরিস্থিতিতে বিগত সরকারের বিভিন্ন সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন পালিয়ে গেছেন।
যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আগে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি ও টার্গেট হামলা ঠেকাতে কাজ করেছে ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো। দিন-রাত উভয় সময়ে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিরাপত্তা দিলেও আতঙ্ক কমছে না সাধারণ মানুষদের। এদিকে ছাত্র জনতার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মাঠ প্রশাসনে। সহাবস্থান নিশ্চিত করতে জেলায় জেলায় বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ছাত্র প্রতিনিধির সাথে শুরু হয়েছে বৈঠক।
প্রবল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের লজ্জাজনক পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলানোর খবর ছড়িয়ে পরার পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় সাধারণ মানুষ নেমে এসে উল্লাস করতে থাকে। এই সময়ে কিছু সুযোগ-সন্ধানী দূর্বৃত্তরা সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়। তেমনি বিভিন্ন এলাকার বাড়িঘর লুটপাট শুরু করে একশ্রেণির সুবিধাভোগী। দোকান-পাট দখল, জমি দখল, ঘাট ও বাজার দখলের মতো ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা টমাস বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে কিছু দূর্বৃত্ত লোক আমাদের বসতঘরে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করে। ঘরে যা কিছু ছিল সব নিয়ে যায়। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র নিয়ে যায়। আমার মা-বাবা ভয়াবহতা দেখে আত্মগোপনে গিয়ে প্রাণ রক্ষা পায়।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমার পূর্ণ সমর্থন ছিল। আন্দোলনের সময় মাঠেও ছিলাম। তারপরও রাজনৈতিক কিছু লোক আমাদের বাড়িতে লুটপাট চালায়। যদিও এসব কর্ম-কান্ডের সাথে সাধারণ ছাত্র-জনতা জড়িত নয়। তিনি বলেন, বেশির ভাগ হামলা-লুটপাট হচ্ছে পূর্ব বিরোধের জের ধরে। এর সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আগে যার সাথে যে বিরোধ ছিল সেই শোধ নিতে টার্গেট করে হামলা করা হচ্ছে। বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গোড়াউন লুটপাট, বাড়ি-ঘর ভাংচুর, চুরি, ছিনতাই, লুটতরাজ করে আনুমানিক দুই কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি করেছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে বাসিন্দাদের বের করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। হামলাকারীরা লুট করে নিয়েছে প্রায় ১৬টি ঘর-বাড়ির দরজা-জানালাসহ নিরীহ মানুষের বিভিন্ন মালামাল।
উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্পর্কে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) সাজ্জাদ হোসেনকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি দৈনিক বঙ্গ সংবাদকে জানান বর্তমানে শিবগঞ্জ উপজেলার পরিস্থিতি একেবারেই শান্ত রয়েছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা আর ঘটছে না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই ভালো আছে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে ট্রফিক পুলিশ কর্মস্থলে না থাকলেও সেই দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের রোভার স্কাউটের সদস্য ও সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার এক বাসিন্দা জানান, আমাদের একেবারে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছিলো। পরে যে যেভাবে পারছি পালায়ছি। আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। সকালে এসে দেখি ঘরের দরজা জানালাও ভেঙে নিয়ে গেছে। পরিবার নিয়ে কোথায় থাকবো এখন মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই। একই অভিযোগ করে আরও কয়েকজন জানান, কিছু রাখা হয়নি সব নিয়ে গেছে। তাদের সবার ধারণা একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী এসব ভাঙচুর ও লুটপাট করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে। তবে বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। যারা ভাঙচুর, লুটপাট ও হামলার সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনের নিকট যথাযত বিচার দাবী করেন।
জেলার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পুলিশ সুপারের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।