টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ২৫ জুলাই, ২০২৪ (বস): গোল আলু, মিষ্টি আলু, পানি কচু, লতি কচু, ওলকচু, মুখিকচু, গাছ আলু কন্দাল জাতীয় ফসল। কন্দাল ফসল চাষবাদ খুবই লাভজনক। এ কারণে প্রতিবছর সদর উপজেলায় কন্দাল ফসলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ ফসল আবাদে কীটনাশক তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। মানব দেহের জন্য এ ফসল নিরাপদ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজ আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৯০ হেক্টরে গোলা আলু, ১১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, ৯২ হেক্টরে পানি কচু ও লতি কচু, ০২ হেক্টরে মাদ্রাজী ওল কচু, ০৮ হেক্টরে বিলাসী মুখিকচু, ৩ হেক্টরে স্থানীয় জাতের গাছ আলুর আবাদ হয়েছে।
তিনি বলেন, গোল আলু হেক্টরে ২২.৬৯ মেটিক টন ফলন দিয়েছে। ৯০ হেক্টরে এ আলু ২ হাজার ৪২ টন ১০ কেজি ফলন দিয়েছিলো। ১ হেক্টরে উৎপাদিত আলু বিক্রি নেমেছে ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ টাকায়। হেক্টর প্রতি ৩ লাখ ৩ হাজার ৮০০ টাকা আলু উৎপাদন খরচ হয়েছে। খরচ বাদে এ আলু আবাদে কৃষকের হেক্টর প্রতি লাভ হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মিষ্টি আলু হেক্টরে ২৯ টন ৭৫ কেজি ফলেছে। সে হিসেবে ১১ হেক্টরে এ আলু ৩২৭ টন ২৫ কেজি ফলন দিয়েছে। প্রতি হেক্টরে মিষ্টি আলুর বিক্রি নেমেছে ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা। আবাদে খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা টাকা। খরচ বাদে কৃষকের হেক্টরে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। পানিকচু ও লতিকচু হেক্টরে ৪২ টন ২৫ কেজি ফলন দিয়েছে। ৯২ হেক্টরে এ কচু ৩ হাজার ৮৮৭ টন ফলেছে। এক হেক্টরের উৎপাদিত কচু ১০ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কচু উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে ৮ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টাকা। খরচ বাদে হেক্টরে লাভ হয়েছে ২ লাখ টাকা। ওলকচু প্রতি হেক্টরে ৩৫ টন ২ কেজি ফলন দিয়েছে। সেই হিসাবে ২ হেক্টরে ওলকচু ফলেছে ৭০ টন ৪০ কেজি । ১ হেক্টরে উৎপাদিত ওলকচু বিক্রি হয়েছে ১১ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা। উৎপাদন খরচ ৯ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকা বাদে ১ হেক্টরে উৎপাদিত ওলকচুতে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা লাভ করেছেন কৃষক। মুখিকচু হেক্টরে ২২ টন ফলন দিয়েছে। ৮ হেক্টরে এ কচু ফলেছে ১৭৬ টন। হেক্টর প্রতি এ কচু চাষে ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বিক্রি নেমেছে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদে হেক্টর প্রতি লাভ হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। গাছ আলু প্রতি হেক্টরে ফলন দিয়েছে ২০ মেট্রিক টন। ৩ হেক্টরে এ আলু ৬০ টন ফলন দিয়েছে। ১ হেক্টরে উৎপাদিত এ আলু বিক্রি নেমেছে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
মাফরোজ আক্তার বলেন, কন্দাল জাতীয় ফসলে প্রচুর পরিমাণ খনিজ ও ভিটামিন উপাদান রয়েছে। এ ফসলে কোন বিষ নেই। এ ফসল মানব দেহের জন্য নিরাপদ ও উপকারী। প্রতি বছরই এ উপজেলায় কন্দাল ফসলের আবাদ বাড়ছে। কন্দাল ফসল আবাদ করে কৃষক প্রচুর আয় করছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরা গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম বলেন, কন্দাল জাতীয় ফসল আবাদে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার খুবই কম। এ ফসল প্রচুর পরিমাণে ফলন দেয়। অন্য যেকোন ফসলের তুলনায় কন্দাল ফসল আবাদে বেশি লাভ হয়। তাই লাভের টাকা ঘরে তুলতে আগামীতে এ জাতীয় ফসলের আবাদ আমি আরো বৃদ্ধি করছি। আমার দেখাদেখি অনেকেই পানিকচুও লতিকচু, মুখিকচু ও ওলকচুর আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।