খবর নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, গোমতীর চরে কৃষকদের ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা

জীবনযাপন

বুড়িচং (কুমিল্লা)প্রতিনিধি :

কুমিল্লার একক সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষি অঞ্চলের একটি গোমতীর চর। প্রতিবছর,সারা বছর ব্যাপী কৃষকরা বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে নিজেদেও ভাগ্য বদলের পাশাপাশি স্বনির্ভও দেশ গঠনেও ভূমিকা রাখছে। বিগত প্রায় দু’দশক গোমতীর চরাঞ্চল প্লাবিত না হওয়ায় কৃষকরা নিরাপদেই চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করলেও চলতি বছওে অতি বৃষ্টির সাথে পাহাড়ি ঢলে গোমতীর চরাঞ্চলপ্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় হাজার হাজার একরের ফসলী জমি। চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষকরা। তবে,পানি কমে গেলে চরের চাষীরা আবারো ঘুওে দাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে,খেয়ালনেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
ভারত থেকে আসা কুমিল্লার প্রধান নদী গোমত জেলার কটকবাজার সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেজেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং,ব্রাহ্মনপাড়া,দেবীদ্বার,মুরাদনগর,তিতাস হয়ে দাউদকান্দিও সাপটা নামক স্থানে মেঘনা নদীতে মিলিতহয়। প্রতিবছর ওপার থেকে আসা নদীটি বর্ষাকালে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে বিপুল পরিমান পলি বহন করে উর্বর করে গোমতীর চরাঞ্চল। আর সেই উর্বও জমিতে চাষীরা ধান, গম, ভূট্টা, ইক্ষু, পাট, আলু, নানা জাতের শাক-সব্জিসহ শীতকালীন বিভিন্ন তরিতরকারি উৎপন্ন করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। দায়িত্বশীল সুত্র মতে সীমান্তের ওপারে ভারত নদীতে একাধিক বাঁধ দেওয়ায় নদীটি বছরের বেশীরভাগ সময়ই অতিমাত্রায় পানি কম থাকে। এতে বিগত বছরগুলোতে নদী তীরের কৃষকরা নিশ্চিন্ত মনে বারো মাসই বিভিন্ন প্রকারের ফসল উৎপাদন কওে আসছিল। চলতি বছওে আমাদেও দেশ ওভারতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গোমতীর দু’কূল ছাপিয়ে যায় পানিতে। এতে চরের পুরো অংশ পানিতে তলিয়ে গেলে সর্বস্বান্ত হয় কৃষক। পরবর্তীতে চরের পানি নেমে গেলে আবারো ভ্যাগ্য ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে নদী তীরের কৃষকরা। এসময় কৃষকরা আগাম ও দ্রুত ফলনশীল সব্জি উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ে। রোপন কওে লালশাত,ডাটা শাক,পুঁই শাক,মুলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি। সরেজমিন গোমতীর কুমিল্লা সদরের আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, কাইচ্চাতলী বুড়িচংয়ের সমেষপুর,বাগিলারা, বাজেবাহেরচর, ভান্তি,পূর্বহুরা, বালিখাড়া,কামাড়খাড়াসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় কৃষকদেও ঘুওে দাড়াবার দৃশ্য। নদীর দু’কূল ছাপিয়ে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা যখন নতুন কওে আবারো ভাগ্য ফেরাতে ব্যস্ত,তখন চরাঞ্চলের উল্লেখিতস্থানগুলোর কৃষকদেও ভরসা নিজেরাই। আমতলী,নিশ্চিন্তপুর, এলাকার চওে চাষাবাদে ব্যস্ত নান্টু নামের এক কৃষক জানান, সরকারী পর্যায়ে কেউই কোন খবর রাখেনি বা নিতে আসেনি। বন্যা পরবর্তীতে মাঠ চাষাবাদের উপযোগী করে গত প্রায় ১৫দিন আগে তিনি চরের প্রায় ১০ একরেরও বেশী জায়গাজুড়ে মুলা চাষ করেছেন। কিছু অংশে করেছেন লাল শাক ও ডাটা শাক। এরই মাঝে তার আবাদ করা মুলা ও লাল শাক বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, জমি তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে, কয়েক দিনের মধ্যেই আলু রোপন করবো। তিনি বলেন, আমতলী,নিশ্চিন্তপুর, এলাকায় তিনিসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য জাহাঙ্গীর,শাহআলম,রুবেল,হালিম,আব্দুল,বগু এ মৌসুমে প্রায় ২০ একরের বেশী জমিতে সব্জিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করছেন। একই দৃশ্য উল্লেখিত বুড়িচং অংশের চরের। সেখানেও এমুর্তে কৃষকরা ব্যস্ত লাল শাক,ডাটা শাক,মুলা চাষে। কৃষক মালু মিয়া বলেন, শাক,মুলা দ্রুত বর্ধনশীল তথা অল্প সময়ে বিক্রিরউপযোগী হয়ে উঠায় বন্যা পরবর্তী চাষীরা প্রাথমিক লাভের আশায় চরের বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে এসব তরকারীর চাষ করেছেন। তিনি আরো বলেন,বন্যা পরবর্তী স্বল্প সময়ে অনেকেই বাজাওে তরকারীর উচ্চ মুল্য দেখে অধিক লাভবান হতে এরই মাঝে ছোট আকারের মুল,লাল শাক,ডাটা শাক বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছেন।এতে লাভ ও হচ্ছে ভালো। তবে,একাধিক কৃষক আক্ষেপ করে বলেন, সরকার কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগীতা করলেও আমাদের আমতলী,নিশ্চিন্তপুর,কাইচ্চাতলী এলাকার চরাঞ্চলের কয়েক শত একর জমি চাষাবাদ করা কৃষকদের জন্য কখনো কোন সরকারী প্রনোদনা বা সাহায্য পাই নি । বন্যা পরবর্তী গোমতীর চরের কৃষকদের অবস্থা জানতে চাইলে, কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, গত আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি বন্যায় গোমতীর চরের কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হলেও এখানকার পরিশ্রমি কৃষকরা বন্যা পরবর্তী দ্রুততম সময়ে চরে শাক-সব্জির আবাদ শুরু করে ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা করছেন। তিনি আরো বলেন, গোমতীর চরের সব্জি কুমিল্লার মানুষের চাহিদার বিরাট একটা অংশ পুরন করে।
ক্যাপশনঃ কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কাচিয়াতলী এলাকার গোমতীর চর থেকে তোলা ছবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *