কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও নেতৃত্ব দেওয়া মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার গান গ্রুপ কমান্ডার উসমান প্রকাশ মগবাগি উসমানকে (৩০) দুই সহযোগীসহ আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, শতাধিক তাজা গুলি এবং চারটি হাতে তৈরি ককটেল বোমা উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে লাল পাহাড়ে ‘আরসার আস্তানা’য় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক অপর দুই সদস্য হলেন মো. নেছার (৩৩) ও ইমাম হোসেন (২২)। তারা সবাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।
র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২০ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন গহীন পাহাড়ে দুষ্কৃতিকারীদের একটি দল আস্তানা গড়ে তুলে দীর্ঘদিন ধরে নানা অপরাধ সংঘটন করছে- এমন খবরে বুধবার গভীর রাত থেকে আজ ভোর পর্যন্ত র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। কয়েক ঘণ্টা ধরে চালানো অভিযানের এক পর্যায়ে সন্দেহজনক আস্তানাটি ঘিরে ফেলেন র্যাব সদস্যরা। উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হয় র্যাব। পরে আস্তানাটি তল্লাশি করে ২২টি দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, শতাধিক তাজা গুলি এবং চারটি হাতে তৈরি ককটেল বোমা পাওয়া যায়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আরকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) সদস্যরা গহীন পাহাড়ে আস্তানাটি গড়ে তুলেছিল। এই আস্তানা ব্যবহার করে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধ সংঘটিত করছিল।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরসার সন্ত্রাসীরা জানিয়েছেন, আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী মাস্টার খালেদের মাধ্যমে আটককৃত উসমান আরসায় যোগ দেন। উসমান মিয়ানমারে বসবাসরত অবস্থায় সে দেশের সেনাবাহিনীর সোর্স হিসেবে একসময় কাজ করতেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আরসাতে যোগ দিয়ে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। উসমান ক্যাম্পে ১০টি গান গ্রুপের শীর্ষ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তার অধীনে মজুদ থাকা অস্ত্রগুলো রাতে গহীন পাহাড়ি এলাকা থেকে ক্যাম্পে প্রবেশ করতেন এবং তাদের টার্গেট অনুযায়ী ক্যাম্পে তাদের নির্দিষ্ট কাজ শেষে আবার ক্যাম্প পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যেতেন।
একইভাবে উসমানের সহযোগী নেছার আরসার গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। তিনিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশি বোমা ও মাইন তৈরির বিশেষজ্ঞ। নেছারের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক মাইন-বোমা তৈরি করেছে।
র্যাব জানিয়েছে, গত এক বছরে আরসার শীর্ষ কিলার গ্রুপের প্রধান, ক্যাম্প কমান্ডার, ইন্টেলিজেন্স সেল ও লজিস্টিক শাখার প্রধানসহ ৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৫টি বিদেশি পিস্তল, দুইটি বিদেশি রিভলবার, ৬টি ওয়ান শুটারগান, ১৬টি এলজি, একটি শর্টগান, ছয়টি এসবিবিএল, ৬৯ রাউন্ড গুলি, ৩ রাউন্ড খালি খোসা, ৫১ দশমিক ৭১ কেজি বিস্ফোরক এবং ২৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।