‘আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করতো না। সে ঢাকার একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করতো। সে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কোটা আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই সকালে সে তার কর্মস্থল হোটেলে যাওয়ার সময় গুলি খেয়ে মারা যায়। আমার নিরপরাধ স্বামীকে তারা মেরে ফেলেছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’
শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে স্বামীহারার বেদনা নিয়ে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকে মোবাইল ফোনে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত আবদুল গণির (৪৫) স্ত্রী লাকি আক্তার।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনে খুশি হয়ে গণির স্ত্রী লাকি আক্তার বলেন, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। আল্লাহ দেখছে আমার নির্দোষ, নিরপরাধ স্বামীকে তারা হত্যা করেছে। আমার সন্তানদের এতিম করেছে, আমাকে করেছে স্বামীহারা। আল্লাহ তাদের বিচার করেছে। এমনভাবে বিচার করেছে ভয়ে তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। এখন আমার একটাই দাবি আমার স্বামী হত্যার বিচার করতে হবে। তাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে।
এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে আমি দুটি সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি। এই সরকারের কাছে আমি আর্থিক সহযোগিতা চাই। আর সরকারের কাছে দাবি, আমার ছেলেকে যেন একটি চাকরি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নিহত আব্দুল গণির বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায়।ওই এলাকার আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে তিনি। ঢাকার গুলশানে-২ সিক্সসিজন নামক আবাসিক হোটেলের কারিগরি বিভাগে কাজ করতেন আবদুল গণি।গত ১৯ জুলাই সকাল ৯টার দিকে তার গোপীবাগ উত্তর বাড্ডার বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান ৬ নম্বর রোডে তার কর্মস্থল আবাসিক হোটেলে যাচ্ছিলেন। পথে হোটেলের মাঝামাঝি স্থানের গুলশান শাহজাদপুর বাঁশতলায় কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পড়ে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ২১ জুলাই বিকেলে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদরের খানখানাপুর আনা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
খানখানাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, গত ১৯ জুলাই ঢাকায় কোটা আন্দোলনের সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আমার এলাকার আব্দুল গণি নিহত হন। সে ঢাকার একটি হোটেলে কাজ করতো। সে তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল। তাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী লাকি আক্তার, ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী আলামিন শেখ ও ছয় বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত।