‘আমরা মরিনি, আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরাই থাকবঃফেসবুকে আরাফাতের ঘোষনা

জাতীয়

তরুণ ছাত্র সমাজের হাত ধরে বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আবারও একবার জাগ্রত হলো বাংলাদেশ। ৫২, ৬৯ ও ৭১-এর পর ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল মূলত এদেশের ছাত্রসমাজ। দীর্ঘ সময় পর ২০২৪ সালে আরেকটি অভ্যুত্থান দেখল বাংলাদেশ। এবারও ছিল ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান। ২৩ দিনের আন্দোলনের তীব্রতার মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন টানা সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন শেখ হাসিনা। এরপর গণভবন থেকেই হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন তিনি। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা। বর্তমানে তিনি ভারতে রয়েছেন।

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা। অনেকে সুযোগ বুঝে দেশ ছাড়তে পারলেও আটকে পড়া অনেক এমপি-মন্ত্রী ও অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের অনেকে আবার বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয়ও চেয়েছেন।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আলী আরাফাত ১০ দিন আত্মগোপনে থাকার পর মুখ খুললেন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস কেন্দ্র করে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা মরিনি, আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরাই থাকব।’ এ ছাড়া স্ট্যাটাসে আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ কোটা আন্দোলনে নিহত সবার বিচার চেয়েছেন তিনি।

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের ফেসবুক স্ট্যাটাস দৈনিক খবর সংযোগ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘ওরা ভেবেছিল, আমাদের শেষ করে দিবে। তথাকথিত অভ্যুত্থানের আড়ালে, (১) পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে, (২) দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে এবং (৩) চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করে, আমাদের একে একে হত্যা করতে চেয়েছিল ওরা।

পরিবেশ চরম ঘোলাটে করে, কোনো বাছ-বিচার ছাড়াই আমাদের হত্যা করার ষড়যন্ত্র চলছিল। এমন অস্থির সময়ে কৌশলগত কারণেই আমাদের অন্তরালে থাকতে হয়েছে। কিন্তু, আমরা মরিনি, আমরা আছি।

আগস্টের ৫ তারিখে আমরা ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছি। সেই দিনই ঘাতকের দল ৪৫০টি থানায় আক্রমণ চালায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে। আহত করে আরও অগনিত পুলিশ সদস্যদের। আনসার ও বিজিবি সদস্যদের উপরও হামলা চালানো হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে জেনেছি (যদিও সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি) সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় অন্তঃসত্ত্বা একজন নারী পুলিশ সদস্যকেও হত্যা করা হয়।

শুধুমাত্র ৫ আগস্টের দিনই ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, পথচারী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, পুলিশ সদস্য এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ১১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়েছে বলে অনুমান সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের।

শিল্পী, সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদদের আক্রমণ করা হয়েছে।

ছাত্রলীগ নেত্রী ইসরাত চৌধুরী দোলাকে ফেনীর বাসা থেকে তিনদিন আগে একদল দুর্বৃত্ত অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে– সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দোলার মতো দেখতে এমন একটি ছবিসহ তথ্য প্রচার হলে জেলাজুড়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়।

ধর্ষিত হয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার এমন মেয়েদের লাশ আজকাল পানিতে ভেসে আসতে দেখা যাচ্ছে।

শত শত মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

কোটা আন্দোলনের সময় ১৬ জুলাই নিহত আবু সাইদসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডকে আমরা নিন্দা জানিয়েছিলাম, দুঃখ প্রকাশ করেছিলাম, বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আবু সাইদসহ অন্যান্য যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিল, তাদের পারিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখা করেছিলেন, তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছিল। আন্দোলনের সময় নিহত মীর মুগ্ধের বাসায় শিক্ষামন্ত্রী গিয়েছিল এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছিল।

কোটা আন্দোলনের সময় যতগুলো দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশ সদস্যরাও ছিল। কিন্তু ঢালাওভাবে সকল মৃত্যুর দায় আমাদের সরকারের উপর দেওয়া হয়েছে।

তাহলে ৫ আগস্টের পর যত নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেই গণহত্যার দায় কার?

জুলাই থেকে আগস্টে এসেও মৃত্যুর মিছিল থামছে না কেন?

এত লাশের উপর দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থকতে চাননি বলে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এত লাশের উপর দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল, তারা তো এখন ক্ষমতার অংশীদার, তাহল তারা কেন আরও লাশ ফেলছে?

শোকাবহ আগস্ট মাসে যেন আরও শোক নেমে এসেছে জাতির জীবনে।

এই আগস্ট মাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যগুলো কারা ভেঙে ফেললো? ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে কারা আগুন দিলো? শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নয়, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন ভাস্কর্যও ভাঙা হয়েছে। নারী জাগরণের পথিকৃত বেগম রোকেয়ার প্রতিকৃতিতে নোংরা ভাষা ব্যবহার করে কালো রং এর দাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশ এখন আইন-শৃঙ্খলা বিহীন অবস্থায় আছে, সবকিছু চলে গেছে দুর্বৃত্তদের দখলে, যেখানে কেউই নিরাপদে নেই।

ইনশাল্লাহ আমরা ছিলাম, আমরা আছি, আমরা থাকব। ৩০ লাখ শহিদের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতা এ দেশের জনগণই রক্ষা করবে।

জুলাই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি মৃত্যুর বিচার করতে হবে। প্রতিটি হত্যাকারী কে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করতে হবে। আমি এই সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই এবং সকল দায়ী ব্যক্তির সাজা চাই।

আবু সাঈদ এবং মীর মুগ্ধসহ সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এবং এই কোটা আন্দোলনে যে সকল প্রাণহানি হয়েছে সকলের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

দেশের সকল মানুষের চাওয়া, এই সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার করতে হবে, সর্বোপরি সেই সকল পরিবারের জন্য যারা তাদের স্বজন হারিয়েছেন। আমি মনে করি, এ সকল মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার হওয়ার জন্য আমরা গোটা দেশ ও জাতি এ সকল পরিবারের কাছে দায়বদ্ধ।

১৫ই আগস্টের জাতীয় শোক দিবসে ৭৫-এর সেই কালো রাত্রে ঘাতকের নির্মম গুলিতে শহীদ বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সকল সদস্য এবং অন্যান্য যারা সেই রাতে শহিদ হয়েছিলেন, সকলের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধ ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *