বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে শ্রীপুরে সংখ্যালঘুর বসত বাড়ীর রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ এবং আওয়ামীলীগের সমর্থক কর্মীদের বসতবাড়ী, দোকানপাটে হামলা, ভাংচুর এবং লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হামলাকারীরা স্থানীয়ভাবে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এসব কর্মকান্ডে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বাড়ি ছেড়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টায় এবং রাত ১১ টায় এসব ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সফিকুল ইসলাম ও লাল মিয়া শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পোষাইদ গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে। হামলাকারীরা তাদের বসতবাড়ী ও মুদি দোকানপাট ভাংচুর করে লুটপাট করে।
সংখ্যালঘু সুকান্ত বর্মণ একই ইউনিয়নের ভিটিপিাড়া গ্রামের সুরেন্দ্র চন্দ্র বর্মনের ছেলে। রাত ১১ টার দিকে তার বসত বাড়ীর রান্না ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়।
অভিযুক্ত যুবদল কর্মী পোষাইদ গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে জাকির হোসেন, সাইফুল ইসলামের ছেলে রুহুল আমীন এবং দরগারচালা গ্রামের আব্দুল হেকিমের ছেলে বিএনপি নেতাফজলুল হক।
ভুক্তভোগী সফিকুল ইসলাম, লাল মিয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বৃহস্পতিবার (০৮ আগস্ট) সকালে স্থানীয় যুবদল কর্মী জাকির হোসেন রাজু ও রুহুলসহ তাদের ২৫/৩০জন সহযোগী পোষাইদ গ্রামের সফিকুল ইসলামের বসতবাড়ীতে হামলা করে। পরে তারা বাড়ীর পাশেই তাদের দুই ভাইয়ের মুদি দোকানে হামলা করে নগদ টাকা এবং মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এদিকে, একইদিন রাতে ভিটিপাড়া গ্রামের শ্রীকান্ত কুমার বর্মনের বসত বাড়ীর রান্না ঘরে আগুন দেয় এবং হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। তার ভাই জগদিস বর্মন অভিযোগ করেন তাদের হামলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান ভিটিপাড়া গ্রামের শ্রীকান্ত কুমার বর্মন এবং পোষাইদ গ্রামের সহোদর সফিকুল ইসলাম ও লাল মিয়া বসতবাড়ীতে হামলার পর তাদের মুদি দোকান ভাংচুর ও লুটপাট চালায়।
অভিযুক্ত জাকির হোসেন রাজু বলেন, আমি এবং সফিক আওয়ামীলীগের সমর্থক ও কর্মী স্থানীয় সফিকুল ইসলামসহ অনেকের সাথে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলাম। এসময় সফিক আমার দল বিএনপিকে নিয়ে কটুক্তি করে এবং আমাকে বাঝে ভাষায় গালাগাল করে।
এক পর্যায়ে সফিক আমার মাথায় আঘাত করলে আমি মাটিতে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। বর্তমানে আমি আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছি। তাদের বসত বাড়ীতে হামলা ও দোকানপাট ভাংচুর করে লুটপাটের সাথে আমি জড়িত নই।
ভিটিপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী শ্রীকান্ত কুমার বর্মন বলেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ফজলুল হক ঘটনার দুই দিন আগে আমাকে হুমকি দিয়ে যায় তাকে টাকা দিতে হবে, না হয় জমি লিখে দিতে হবে। টাকা বা জমি লিখে না দিলে আমার ঘরবাড়ি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিবে এবং এলাকা ছাড়া করার হুমকী দিয়ে চলে যায়।
হুমকির দুই দিন পরেই বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাড়িতে আগুন দেয়। আমার ধারনা ফজলুল হকের হুকুমে রাতের আঁধারে আমার বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরিবার নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছি।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ফজলুল হক বলেন, শ্রীকান্ত কুমার বর্মনের সাথে আমার জমি সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। তাকে হুমকী অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট।
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আকতারুল আলম মাষ্টার বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সকল নেতা কর্মীদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যার যার অবস্থান থেকে শান্ত থাকা এবং জনগনের পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা শান্তি চাই।
আওয়ামীলীগের লোকজন তাদের নিজেদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে। খোঁজ নিয়ে বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা জানান।
শ্রীপুর থানায় সদ্য যোগদানকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন দিলে তার সরকারি মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় এসব ঘটনার বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।