অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও বঞ্চিত সেই মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার

জাতীয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে অন্যায়ের শিকার অনেকেই পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের পদোন্নতি এবারও আটকে গেছে। কারণ হিসেবে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের (ডি পি) কথা বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাতে এসকে তাসনিম আফরোজ ইমি তার ফেসবুকে এমন অভিযোগ করেছেন।

ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের কথা আপনাদের অনেকেরই মনে থাকার কথা। ২০১৭ সালে তিনি উপ পরিচালক হিসেবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে যোগদান করেন। ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড আড়ং এ অভিযান চালিয়ে তিনি আলোচিত হন। এই সময় তার বদলির অর্ডার হয়। আপনাদের প্রতিবাদের ভিত্তিতেই প্রশাসন একপ্রকার চাপে পড়ে তখন তার বদলি আদেশ বাতিল করে।

জনগণের কাছে প্রিয় হয়ে উঠলেও সেই সময় তিনি ক্ষমতাধর অনেকের কাছেই অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। রমজান মাসে অফিসার্স ক্লাবে অভিযান চালিয়ে মানহীন খাবার শনাক্ত এবং রঙের কৌটা জব্দ করেন। তৎকালীন ক্যাবিনেট সেক্রেটারির বিরাগভাজন হন একেবারে শুরুতেই। কারওয়ান বাজারের চাঁদাবাজি নিয়ে অভিযান চালাবার পরে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসে। বিরাগভাজন হন ততকালীন স্থানীয় সাংসদের। তিনি বের করে ফেলেন এস আলম গ্রুপের অনিয়মও। ওদের প্রতিষ্ঠানকে প্রতি ড্রামে তেল কম দেয়ার কারণে জরিমানা করা হয়। তাছাড়া আড়ং, ভাসাভি, বিডি বাজেট বিউটির মতো জনপ্রিয় অনেক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানোর ঘটনাগুলো আলোচিত হয় ব্যাপকভাবে। মৌচাকে ঢিল দেয়ার ফলাফল ভালো হবে না, জানা কথাই। ২০২৩ এর আগস্টে, যখন তাদের ব্যাচের প্রমোশনের কথাবার্তা হয়, তখন তার এক সহকর্মী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবার ঠিক দুইদিন আগে করা ওই অভিযোগের কারণে যে ফাইল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তদন্ত হওয়ার পরে তদন্ত রিপোর্টসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাবার কথা, সে ফাইল সরাসরি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত ছাড়াই পাঠিয়ে দেয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কেন পাঠিয়ে দেয়া হয় তা আশা করি বুঝিয়ে বলতে হবে না পাঠকদেরকে। অবশ্য তার সেই সহকর্মীকে একাধিকার বাকি সহকর্মীরা বলতে শোনে মনজুর শাহরিয়ারের প্রমোশন কিভাবে হয় তা সে দেখে ছাড়বে। তা যদি বাকিরাও দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে আরেকটা বড় চক্র ধরা পড়বে বলে বিশ্বাস রাখি। প্রশাসনের উচিত দ্রুততম সময়ে বিষয়টি আমলে নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পরে অন্যায়ের শিকার অনেকেই পদোন্নতি পেয়েছেন। তবে মনজুর শাহরিয়ারের পদোন্নতি এবারও আটকে গেছে। কারণ হিসেবে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্তের (ডি পি) কথা বলা হয়েছে। এইরকম ঘটনার মিল আরও এক জায়গায় আপনারা পাবেন। কেউ বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হলে কয়েকটি ক্ষেত্রে এক পক্ষ পুলিশ ভেরিফিকেশনের ঠিক আগে আগে সুপারিশপ্রাপ্তের নামে ফৌজদারি মামলা করে দেয়। ফলাফল? প্রার্থীর নিয়োগ আটকে যাওয়া। প্রথম আলোর তৎকালীন সাংবাদিক শরিফুল হাসান এরকম একটা ঘটনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন একবার। ঘটনা এরকমই কিছু একটা হয়েছে, তা দায়িত্ব নিয়ে বলছি না। তবে এরকম কিছু হবার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না অভিযোগ দেবার সময় বিশ্লেষণ করে। অর্পিত দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পদে পদে প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়েছে মানুষটাকে। কয়েক মাস আগেও সিভিয়ার হার্ট ফেইলিউরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন দীর্ঘদিন। জ্বি হুজুরি করে কেউ কেউ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করবে, আর কেউ নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে চাইলে এভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে- তা তো হতে পারে না। আমাদের আন্দোলনটা তো এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই ছিল। আমাদের যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নাই..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *