সরকারি-বেসরকারি নানা ঘোষণার পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে সংকট কাটছে না

জাতীয়

সরকারি-বেসরকারি নানা ঘোষণার পরও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা নিয়ে সংকট কাটছে না। পুরো প্রক্রিয়ায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতাও দেখা যাচ্ছে।

 

বিচ্ছিন্নভাবে বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সহযোগিতায় এগিয়ে আসলেও রোগীরা কতটুকু পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। হাসপাতালের অপারেশন ও শয্যা ফ্রি করা হলেও অনেককে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। ফলে আহতদের চিকিৎসার পুরোটাই ফ্রি করা হবে, এই ঘোষণার বিষয়ে হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে কথা বললে ভিন্নচিত্র পাওয়া যাচ্ছে।

গত ১৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন ৩৩ বছরের জাকির সিকদার। তিনি গুলশানের একটি পোশাকের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। চিকিৎসা নিচ্ছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)।

জাকির ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। এরপর আরও তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখনও ইনফেকশন আছে। কোনো ধরনের সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ এক হাজার, কেউ দুই হাজার বা পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ফ্রি চিকিৎসা দিচ্ছে। কিন্তু বাইরে থেকে তো আমাদের খাবার কিনে খেতে হচ্ছে, কিছু ওষুধও কিনতে হচ্ছে। অনেকেই বলেছেন, পরে যখন বিকল্প পা লাগাতে হবে, তখন তারা সহযোগিতা করবেন।

শরীরে প্রায় তিন শতাধিক গুলির স্প্রিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ২৮ বছরের যুবক মো. রাশেদুল করিম ওরফে রাফাত। স্বপ্ন ছিল বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করার। কিন্তু এখন বৃদ্ধ বাবা-মার বোঝা হয়ে গুলির যন্ত্রণা নিয়ে কাটছে দিন।

রাফাত রাজবাড়ি পৌরসভার কাজীকান্দা এলাকার মো. সামছুউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। ২০২২ সালে আসহানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করেছেন। ঢাকার গোলাপবাগে বড় বোনের বাসায় থাকতেন। গত ১৮ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাজার করতে বের হয়ে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষের মাঝে পড়ে পিঠ ও হাতে গুলিবিদ্ধ হন । এ সময় তার হাত ও পিঠে প্রায় ৪ শতাধিক ছররা গুলি লাগে। গুলিগুলো খুব কাছ থেকে করায় চামড়া ভেদ করে মাংসপেশির ভেতরে ঢুকে গেছে। পাশাপাশি বাম হাতের কব্জি ভেঙে যাওয়াসহ মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। তার চিকিসা নিয়ে এখন উদ্বিগ্ন পরিবার।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে আন্দোলনের সময় আহত ১৬০ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের জন্য ‘স্পেশালাইজড ডেডিকেটেড কেয়ার ইউনিট’ করা হচ্ছে। এই ইউনিটের জন্য পৃথক চিকিৎসক ও নার্স থাকবে। সেখানে মানুষের অবাধ যাতায়াত থাকবে না। হাসপাতাল থেকেই যথাসম্ভব ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শুধু হাসপাতালের ওষুধ নয়, বাইরে থেকে যেসব ওষুধ কিনতে হচ্ছে, সেটাও আমরা কিনে দিচ্ছি। ফলে এখানে যারা আছে, তাদের কোনো ধরনের খরচ করতে হচ্ছে না।

কবে থেকে এই ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে- জানতে চাইলে জনাব আসাদুজ্জামান বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী যখন হাসপাতালে এসেছিলেন, তিনিও বলেছিলেন। তার আগে থেকেই মূলত ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। হাসপাতালের একটি বিশেষ ফান্ড থেকে এই খরচগুলো দেওয়া হচ্ছে। সরকার থেকে এখনও আমরা সরাসরি কোনো ফান্ড পাইনি। তবে ফান্ড ছাড়ের বিষয়গুলো প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, খুব শিগগিরই পাওয়া যাবে।

বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে আহতদের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে। ব্র্যাক ছাড়াও সুহানা অ্যান্ড আনিস আহমেদ ফাউন্ডেশন (এসএএএফ) সহযোগিতা করছে। সংস্কার আন্দোলকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে মিলে আহতদের চিকিৎসায় জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের সঙ্গে তারা কাজ করছে। ফাউন্ডেশনটি শনিবার বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম পঙ্গু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেখানে ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ছাড়াও তিন জন সমন্বয়ক ও হাসপাতালের ঊর্ধ্বতনরা ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *