ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেলওয়ের জলাশয় অবৈধভাবে বালু ফেলে ভরাটের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বড় হরণ লেবেল ক্রসিং এলাকায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) বিল্লাল মিয়া, স্থানীয় মোঃ শাহানুর মিয়া আওয়াল মিয়া, কাজী আমেনা খাতুন প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বড় হরণ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশিকুল ইসলাম ও অভিভাবক সদস্য উম্মেদ হাসানসহ স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা কোন ধরনের লিজ (বন্দোবস্ত) না নিয়েই মার্কেট করার জন্য রেলওয়ের জলাশয়টি অবৈধভাবে বালু ফেলে ভরাট করছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তারা মারধরসহ হত্যার হুমকি দেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন মিয়ার স্ত্রী কাজী আনোয়ারা খাতুন ও ইউপি সদস্য বিল্লাল মিয়া বলেন, হোসেন মিয়া রেলওয়ের জলাশয়ের ৩৮শতক জায়গা রেলওয়ে থেকে বন্দোবস্ত এনেছেন।
হোসেন মিয়ার নামে বন্দোবস্ত থাকলেও আশিকুল ও উম্মেদ গংরা জোরপূর্বক বালু ফেলে জলাশয় ভরাট করছেন। জলাশয়ের পশ্চিমদিকের চারটি দোকান ভেঙ্গে ফেলেছেন ও চারটি ফলের গাছ তারা কেটে ফেলেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লেবেল ক্রসিং এলাকায় জলাশয়ে বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে বালুর উপর একটি ভেকু মেশিন রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, বড় হরণ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশিকুল ইসলাম ও অভিভাবক সদস্য উম্মেদ হাসানসহ স্থানীয়রা প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক অবৈধভাবে রেলওয়ের জলাশয় বালু ফেলে ভরাট করছেন।
কিন্তু পুলিশ নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় হোসেন মিয়াসহ তার দুই ভাই বড় হরণ লেবেল ক্রসিং এলাকার দক্ষিণ পাশের জলাশয়ের ৩৮শতক জায়গায় মাছ চাষের জন্য রেলওয়ের কাছ থেকে বন্দোবস্ত আনেন।
জলাশয়ের পশ্চিমদিকের সাড়ে চার শতক জায়গায় ১০টি দোকান ভিটির জন্য বানিজ্যিক বন্দোবস্ত পান স্থানীয় ছয়জন ব্যক্তি।
তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল বাকির বিল্লাহ চারটি দোকান ভিটি, আওয়াল মিয়ার একটি, নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য সালাম মিয়ার দুটি এবং দেলোয়ার হোসেন, মোঃ শাহানূর ও হানিফ মিয়ার একটি করে দোকান ভিটির জন্য বানিজ্যিক বন্দোবস্ত রয়েছে।
কিন্তু গত ৭ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি বড় হরণ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশিকুল ইসলাম, অভিভাবক সদস্য উম্মেদ হোসেন ও মাদ্রাসার তত্ত্ববধায়ক সুলতান উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তাদের দোকান ভিটি ভেঙে লুটপাট চালানো হয়।
পরে ১৬ মার্চ দুটি বালুবাহী ট্রাক দিয়ে হোসেন মিয়ার বন্দোবস্ত পাওয়া জলাশয়ে বালু ফেলে ভরাট শুরু করে প্রভাবশালীরা।
১৮ মার্চ দিবাগত রাত একটার দিকে আবার ট্রাকে বালু ফেলে জলাশয় ভরাটের চেষ্টা করে প্রভাবশালীরা।
হোসেন মিয়াকে একাধিকবার তারা প্রাণে হত্যার হুমকিও দেন।
এসব ঘটনায় হোসেন মিয়া গত ৮ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি সদর থানায়, ১৩ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সুপার, ১৪ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে দ্রুত বিচার আইনে, ১৯ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১৪৪ জারি আবেদন চেয়ে ও একইদিন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে আশিকুল ইসলাম, উম্মেদ হোসেন, সুলতান উদ্দিন আহমেদসহ ৮জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে রাতে ট্রাকে করে এনে বালু ফেলে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সদর থানা, আখাউড়া রেলওয়ে থানা ও আদালতে দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১সালের ৩০জুন পর্যন্ত পাঁচ বছরের জন্য সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের বড় হরণের লেবেল ক্রসিং এলাকার দক্ষিণ পাশে হরণখোলা মৌজা বিএস ৫৪৪ দাগে রেলওয়ের ৩৮শতক জলাশয় ও পতিত ভূমি তিন ভাই স্থানীয় শফিকুল ইসলাম, হোসেন মিয়া ও ছগির মিয়ার নামে বন্দোবস্ত দেন রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ। ২০১৬ সাল থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া জায়গায় মাছ চাষাবাদ ও স্থলভূমিতে দোকানঘর নির্মাণ করে ভোগ দখল করে আসছেন হোসেন মিয়া। রেলওয়ের ঢাকার ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার চাহিদাপত্র মতে চলতি বছরের গত ৯ জানুয়ারি রেলওয়ের প্রাপ্য রাজস্ব ৭ হাজার ৭০০ টাকা সোনালী ব্যাংকের কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আইসিটি শাখায় টাকা জমা ৩৮শতক জলাশয় বন্দোবস্তের মেয়ার এক বছর বাড়ান হোসেন মিয়া।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, জলাশয় ভরাটের অভিযোগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বড় হরণ এলাকায় অভিযান চালিয়ে খননযন্ত্র জব্দ করে পাইপ ভেঙে দিয়েছি। জলাশয় বালু ভরাটের অভিযোগে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছি।
এ ব্যাপারে বড় হরণ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার তত্ত¡াবধায়ক সুলতান উদ্দিন আহমেদ খান ও অভিভাবক সদস্য উম্মেদ হাসান বলেন, মাদ্রাসার নামে জলাশয়ের জায়গাটি বানিজ্যিক বন্দোবস্ত দিয়েছে রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ। হরণখোলা মৌজার সীমানা পর্যন্ত মাস্টার প্লানের মাধ্যমে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। বানিজ্যিক লিজ পাওয়ায় বালু ফেলে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ এমরানুল ইসলাম বলেন, থানাসহ আদালতে তারা অভিযোগ দিয়েছে। কিন্তু অভিযোগের বিষয়ে আদালত কোনো আদেশ দেননি। আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
