তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি। তারুণ্য কারও বাধা মানতে চায় না। আপন গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলে। নদীর দুপাড়ে উঁচু বাঁধ না দিলে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে যেমন নদীর পানি দুকূল প্লাবিত করে ফসলের খেতসহ বসতবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি তারুণ্যের চাঞ্চল্য সুপথে নিয়ন্ত্রণ না করলে যে কোনো মুহূর্তে বিপথগামী হতে বাধ্য।
যখন যুবসমাজ চরিত্রবান ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হবে তখন তারাই উম্মতের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করবে, আল্লাহর দেওয়া দ্বীনের প্রচার-প্রসারে ঝাঁপিয়ে পড়বে এবং তারাই মানুষকে দ্বীনের প্রতি আহ্বান করবে। কারণ আল্লাহতায়ালা যুবকদের দৈহিক শক্তি, উদ্ভাবনী মেধা, চিন্তা ও গবেষণা করার যোগ্যতা বয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি দিয়েছেন।
যদিও বয়স্কদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞানের গভীরতা ও বুদ্ধিমত্তা যুবকদের চেয়ে অনেক বেশি অগ্রগামী, কিন্তু দৈহিকভাবে দুর্বল হওয়ায় এবং সাহসের অভাব থাকার কারণে শক্তিশালী যুবকরা যেসব কাজ আঞ্জাম দিতে পারে তা আঞ্জাম দেওয়া বয়স্কদের দ্বারা সম্ভব নয়।
ইসলামের সুমহান বাণী ও আদর্শ যারা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিয়েছেন তাদের অগ্রযাত্রায় রয়েছেন একঝাঁক তরুণ সাহাবি। তন্মধ্যে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস, মুয়ায ইবনে জাবাল, যায়েদ ইবনে সাবেত, খালেদ ইবনে ওয়ালিদ ও মুসান্নাহ ইবনে হারেসা (রা.) প্রমুখ যুবক সাহাবিদের ভূমিকা অপরিসীম।
তারা সবাই ছিলেন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর গুরু দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ, জাতি ও সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। তারুণ্যের সময়টাকে পবিত্র কুরআনে ‘শক্তি’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।
তারুণ্য সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা রুমের ৫৪ নং আয়াতে বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের দুর্বল (শিশু) অবস্থায় সৃষ্টি করেন অতঃপর দুর্বলতার পর শক্তি দান (যৌবন) করেন; শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য’।
এ কারণে ইসলাম তরুণদের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং কল্যাণে বিশেষ পরিচর্যার কথা বলেছে। আমাদের প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) যে কোনো ক্ষেত্রে সব সময় তরুণদের গুরুত্ব দিতেন, তিনি তরুণদের খুব ভালোবাসতেন।
রাসূল (সা.) যৌবনকালকে গনিমত তথা ‘মূল্যবান সম্পদ’ হিসাবে অভিহিত করে তা মূল্যায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা জীবনের শ্রেষ্ঠ এ সময় সম্পর্কে পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মুসতাদরাকে হাকেমে বর্ণিত হাদিসে আমর ইবনে মায়মুন আল আওদি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশস্বরূপ বলেন, পাঁচটি বস্তুর আগে পাঁচটি বস্তুকে গনিমত মনে কর। যথা-১. তোমার বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে ২. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্বাস্থ্যকে ৩. দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে ৪. ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং ৫. মৃত্যুর আগে জীবনকে। তরুণদের সম্পর্কে রাসূল (সা.) জামে তিরমিজিতে বর্ণিত হাদিসে আরও বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মানুষকে ৫টি প্রশ্ন করা হবে।
তার মধ্যে একটি হলো তার তারুণ্যকে সে কীভাবে তাড়িত করেছে, যৌবনকে কীভাবে ব্যয় করেছে’। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনের এ মূল্যবান সময়টাকে আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে পরিচালনা না করলে হাশরের ময়দানে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
একজন মানুষের সফল বা ব্যর্থ হওয়া তার ক্ষমতার ওপর যতটা না নির্ভর করে, তার চেয়ে বেশি তার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। যারা সফল হয়, তারা সফল হওয়ার আগে থেকেই সফল মানুষের মতো আচরণ করে। এ বিশ্বাসই একদিন সত্যে পরিণত হয়।
আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে, আপনি অবশ্যই সফল হবেন, তবে আপনার ব্যবহারেও তা প্রকাশ পাবে। বস্তুত দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করলে নিজেকে সংশোধন করা সম্ভব-১. আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করা, যার ফলে তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে সহজ হয় ২. সময়ের অপচয় রোধ করা। কেননা মন যেমন চায় তেমন না চলে সত্য পথের অনুসরণ করলে অন্তর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
সূরা নাজিয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয় জাহান্নামই হবে তার আবাস। পক্ষান্তরে যে স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।’